মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসা হত্যা মামলার আসামিদের ওপর বাদী ও হত্যার শিকার ব্যক্তির স্বজনদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের এজলাস কক্ষে বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর কোর্টের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে বুধবার রাতে ২০০২ সালের এর দ্রুত বিচার (আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ আইন) আইনের ৪/৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর মডেল থানা মামলা নম্বর ৬৬/২০২২ ইংরেজি।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় ঘটনাস্থল থেকে ধৃত কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএম খালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার মৃত উমর আলীর পুত্র মোঃ সাজ্জাদ (২২) ও মোঃ জাহেদ আলী (৩০) এবং একই এলাকার আমির হামজার পুত্র আরিফফুল্লাহ (২৪) সহ আরো ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।
আসামী মোঃ সাজ্জাদ ও মোঃ জাহেদ আলী পিএমখালী-তে নিহত মোর্শেদ আলী প্রকাশ মোর্শেদ বলীর ভাই। এরমধ্যে মোঃ জাহেদ আলী মোর্শেদ আলী প্রকাশ মোর্শেদ বলী হত্যা মামলার বাদী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বুধবার সকাল ১০টার দিকে ২ জন লোক দৌড়ে এসে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে আশ্রয় নেন। সাথে সাথে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত আসামী মোঃ সাজ্জাদ (২২) ও মোঃ জাহেদ আলী (৩০) এবং একই এলাকার আমির হামজার পুত্র আরিফফুল্লাহ (২৪) সহ ১৫/২০ লোক লাটিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে অনাধিকারভাবে প্রবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করে।
অনাধিকার প্রবেশকারীরা এজলাস কক্ষে আগত বিচারপ্রার্থী লোকজনের মধ্যে ভয়ানক আতংক, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুর করে। দুর্বৃত্তরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কম্পাউন্ডে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ইট, পাথর নিয়া এলোপাতাড়ি ইট ও তাদের পরিহিত জুতা এজলাস কক্ষের ভিতরে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করতে থাকে।
এ সময় আদালতে ডিউটিরত পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল বশর, আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা কোন কিছুই পরোয়া না করে এজলাস কক্ষের দরজা ভাংচুরের চেষ্টাসহ ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এসময় আসামীরা এজলাস কক্ষে আশ্রয় নেওয়া উক্ত দু’ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপুরি ইটের টুকরা নিক্ষেপ করলে তা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খাঁন (৫০) এর মাথা ঘেঁষে চলে যায়। এতে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।
ঘটনাস্থলে অবস্থানরত দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি তখন কোর্ট ইন্সপেক্টরকে জানান। তিনি বিষয়টি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অবহিত করলে তাৎক্ষণিকভাবে কক্সবাজার শহর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশের মোবাইল টিম-১ এর অফিসার সাব ইন্সপেক্টর এস.এম.এম আতিকুজ্জামান ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে আসেন।
এসময় আসামীরা পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে উল্লেখিত ৩ জন আসামীকে মামলার সাক্ষীরা সহ অন্যান্যদের সহায়তায় ধৃত করা হয়। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ধৃত আসামীরা প্রত্যক্ষভাবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। কিন্তু ধৃত আসামীরা অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামীদের কোন নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেনি। তবে ঘটনাস্থল তথা কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও তার আশেপাশে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হতে আসামীদের সনাক্ত করা যাবে মর্মে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খাঁন (লিটন) (৫০), পিতা-মৃত সলিম উল্লাহ খান, এপিপি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান (৬০), পিতা-মৃত আবদু শুক্কুর, এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম (৫৫), পিতা-মৃত মোক্তার আহমদ সিকদার, কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৭), পিতা- মোঃ হাফেজ আহমদ, অফিস সহায়ক সন্তোষ দাশ গুপ্ত (৪০), কনস্টেবল আবুল বশর (কং/২২৩৯) কে মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা প্রচুর আলামত জব্দ তালিকা মূলে থানায় মামলার সাথে দাখিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর বাজারে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বিকেল ৫ টার দিকে মোরশেদ আলি প্রকাশ মোরশেদ বলিকে জনসম্মুখে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত মোরশেদ আলি প্রকাশ মোরশেদ বলী কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার মরহুম ওমর আলীর পুত্র।
এ ঘটনায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামী করে গত ৯ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই জাহেদ আলী। যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ১৭/২০২২ এবং জিআর মামলা নম্বর : ২২৭/২০২২ ইংরেজি (সদর)।
এ মামলার এজাহার ক্রমিকের ১ নম্বর আসামী আবদুল মালেক ও ৩ নম্বর আসামী কলিমুল্লাহ হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করলে হাইকোর্ট তাদের আগাম জামিন মঞ্জুর না করে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা মতো মোরশেদ আলী হত্যা মামলার আসামীদ্বয় বুধবার সকালে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। আসামী আবদুল মালেক ও কলিমুল্লাহ কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন, এ খবর পেয়ে নিহত মোরশেদ আলী প্রকাশ মোরশেদ বলী’র স্বজনেরা সংঘবদ্ধভাবে তাদেরকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে এ হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী এবং এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোরশেদ আলী প্রকাশ মোরশেদ বলী হত্যা মামলার আসামী আবদুল মালেক ও কলিমুল্লাহ হামলাকারীদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য মূলত দৌড়ে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
পরে আসামী আবদুল মালেক ও কুলিমুল্লাহ কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আসামীদ্বয়কে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।