মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর প্রচুর সরঞ্জাম রাখার দায়ে কক্সবাজারে এক রোহিঙ্গা অস্ত্রের কারিগরকে ১৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। একইসঙ্গে রায়ে এ মামলার অপর দুই আসামী আবদুর রহমান এবং নুরুল আলমকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন বিচারক।
আজ মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কক্সবাজারের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নং-৩ এর বিচারক মাহমুদুল হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন, মায়ানমারের মংডুর আকিয়াব থানার কেরী পাড়ার মকবুল আহম্মদের পুত্র শহীদুল্লাহ্ (২২)। দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা শহীদুল্লাহ্ একজন অস্ত্র তৈরীর কারিগর।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এবং কক্সবাজারের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নং-৩ এর এপিপি অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এপিপি জিয়া উদ্দিন আহমদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, বিজ্ঞ বিচারক কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মাহমুদুল হাসান আসামীকে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ধারায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং একই আইনের ১৯(এফ) ধারায় অস্ত্র তৈরীর অবৈধ সরঞ্জাম রাখার দায়ে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন।
প্রদত্ত ২ মেয়াদের সাজা একই সাথে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করলেই সাজার মেয়াদ পূর্ণ হবে বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে কক্সবাজারের রামু’র ঈদগড় ইউনিয়নের ছগিরাকাটা গ্রামের জনৈক আবদুর রহমান এর উঠানে রামু থানা পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা অস্ত্রের কারিগর শহীদুল্লাহ্-কে গ্রেপ্তার করে। পরে তার কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি বন্ধুক এবং সেখানে থাকা অস্ত্র তৈরীর ৩৭ ধরনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
ধৃত আসামী শহীদুল্লাহ্’র স্বীকারোক্তি মতো একইদিন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঈদগড়ের ছগিরাকাটা পশ্চিম মুরার গভীর অরণ্যে পাহাড়ের উপরে ২ চালা বিশিষ্ট একটি ঘরে পৃথক আরেকটি অভিযান চালানো হয়। এ অভিযান টের পেয়ে ২ জন লোক সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ সেখান থেকে আরো ১টি দেশীয় তৈরি বন্ধুক এবং ৩৬ আইটেম অস্ত্র তৈরীর অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় কক্সবাজারের রামু থানার এএসআই ওমর ফারুক বাদী হয়ে মায়ানমারের মংডুর আকিয়াব থানার কেরী পাড়ার মকবুল আহম্মদের পুত্র শহীদুল্লাহ্ (২২), পলাতক হিসাবে রামু’র ঈদগড়ের ছগিরাকাটার ফজল করিমের পুত্র আবদুর রহমান এবং আবদুশ শুক্কুরের পুত্র নুরুল আলমকে আসামী করে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) এবং একই আইনের ১৯(এফ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ১৭/২০০৬ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৬৪/২০০৬ ইংরেজি (রামু) এবং এসপিটি মামলা নম্বর : ০৪/২০০৬ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলাটি ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীপক্ষে জেরা, আলামত প্রদর্শন, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) এবং ১৯(এফ) ধারায় আসামী রোহিঙ্গা অস্ত্রের কারিগর শহীদুল্লাহ্কে দোষী সাব্যস্ত করে দীর্ঘ ১৬ বছর পর মঙ্গলবার বিচারক রায় প্রদান করেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এপিপি অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী ও অন্যান্য সকল এভিড্যান্স যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটির সন্তোষজনক রায় ঘোষণা করতে পেরেছেন।