মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা করার কারণে বাদীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর একটি আদালত। একইসঙ্গে মামলার আসামিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য বাদীর প্রতি আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার (৩ আগস্ট) রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আল্লাম এ আদেশ দেন।
রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী মো. নজরুল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামিদের বিরুদ্ধে অনধিকার প্রবেশ, ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা, শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর কিছু অভিযোগ এনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার শিয়ালা প্রেমতলী গ্রামের মো. মতিউর রহমান শাহ একটি ফৌজদারি মামলা করেছিলেন। কিন্তু বিচার শেষে আদালতের কাছে স্পষ্ট হয় যে, বাদীর অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক।
ফলে আদালত আসামিদের খালাস দিয়ে বাদীকেই ০৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে দুজন আসামির প্রত্যেককে ১০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বলা হয়েছে আদালতের আদেশে।
আদালত তার আদেশে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ আনয়ন করা হলেও বাদী কিংবা তার কোনো একজন সাক্ষী আদালতকে শ্বাসরোধ সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি। তদন্তকারীর প্রতিবেদনেও থেকেও দেখা যায়, শ্বাসরোধ করে হত্যার মতো কোনো কিছুই ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে ঘটেনি।
বাদীর জমিতে প্রবেশ করে আসামিরা তার ঘরবাড়ি ভেঙেছেন মর্মে বাদী যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষেও বাদীপক্ষের সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেননি। বাদীপক্ষের উপস্থাপিত দুজন সাক্ষীর একজন বলেছেন, ঘটনার দিন তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। অপরজন বলেছেন, ওই জমিতে মূলত বাদী নয়, বরং আসামির স্থাপনা ছিল।
সাক্ষ্যপ্রমাণ, তদন্তকারীর প্রতিবেদন এবং উভয়পক্ষের বক্তব্য অনুসন্ধানে আদালতের কাছে স্পষ্ট হয় যে, বাদী তার জমি আসামির কাছে বিক্রি করে ভিন্ন জায়গায় গিয়ে বসবাস করছিলেন। পরে আসামি সেই জমিটি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার উদ্যোগ নিলে বাদী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বাদী চেয়েছিলেন, জমিটি তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি না করে বাদীর কাছেই যেন বিক্রি করেন আসামি। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় আসামি বাদীর কাছে ওই জমি বিক্রি না করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন বাদী।
বাদীর আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মনে হওয়ায় আসামিদের প্রত্যেককে বাদী কেন ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন না এবং বাদীকে কেন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হবে না, সে-মর্মে বাদীকে তাৎক্ষণিকভাবে কারণ দর্শানো হয়। বাদী কারণ দর্শানোর জন্য দুই দিনের সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু দুদিন পর আজ ধার্য তারিখে বাদীপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেননি।
ফলে আসামিদের প্রত্যেককে ১০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার জন্য আদালত বাদীকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারার (৫) উপধারার বিধানমতে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা আনয়ন করার দায়ে ফরিয়াদীকে ০৭ (সাত) দিনের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।