ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোন নিহত হলেও অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর আগে সড়কেই ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড আগামী এক মাসের মধ্যে এই টাকা দিতে বলা হয়েছে।
আজ রোববার (৭ আগস্ট) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন। ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
গত বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) শিশুটির পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে তিন মাসের সময় আবেদন করে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড।
এর আগে গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর আগে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখাশোনার জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
একইসঙ্গে নবজাতকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে এ টাকা দিতে বলা হয়।
সেই সাথে তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে শিশুর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সড়কেই ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতক প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর) হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এ রিট দায়ের করেন।
রিটে শিশুর যাবতীয় খরচ বহন ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়াও রিটে দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কী সহযোগিতা করা যায় তা জানতে চাওয়া হয়।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং যে ট্রাকচাপায় এই ঘটনাটি ঘটেছে তার মালিককে রিটে বিবাদী করা হয়।
এর আগে গত রোববার (১৭ জুলাই) বিষয়টি বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ওই আইনজীবী শিশুর দেখভাল ও ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে আদালতের কাছে স্বপ্রণোদিত আদেশ প্রার্থনা করেন। তখন আদালত তাকে বিষয়টি আবেদন আকারে নিয়ে আসতে বলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মারা যান এক অন্তঃসত্ত্বা নারী, তার স্বামী ও মেয়ে। তবে মারা যাওয়ার আগে অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট থেকে (পেট ফেটে গিয়ে কিংবা কেটে গিয়ে) সড়কেই ভূমিষ্ঠ হয় একটি ফুটফুটে নবজাতক।
শুধু তাই নয়, অলৌকিকভাবে বেঁচেও গেছে সেই নবজাতকটি। প্রাথমিকভাবে ওই নবজাতককে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন— রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের শিশু সন্তান সানজিদা। তাদের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি এলাকায়।