অবকাশে হাইকোর্টে দুই ধাপে ১৪ বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ
সুপ্রিম কোর্ট

‘প্রধান বিচারপতি পদক’ -এর জন্য আবেদন আহ্বান

বিচার বিভাগের সব স্তরে দক্ষ ও সেরা কর্মকর্তাদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (১০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, বিচার বিভাগে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের ও বিচার-প্রতিষ্ঠানসমূহের বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে  প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে এবং বিচারিক সেবার উৎকর্ষ অর্জন, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, শুদ্ধাচার, সক্ষমতা, দক্ষতার উন্নয়ন অ বিকাশে এবং বিদ্যমান মামলা জট নিরসনকল্পে মামলা-মোকদ্দমার নিষ্পত্তিতে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা, ২০২২’ –এর অনুমোদন দিয়েছেন।

এমতাবস্থায় প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

‘প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা, ২০২২’ –এর বিধান ৯(গ) অনুসারে জেলা ও মহানগর বাছাই কমিটি গঠন সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি ও কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবীসহ তালিকা সরাসরি অথবা ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর প্রেরণ করতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তির সফট কপি নির্ধারিত ই-মেইলে প্রেরণ করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিচারিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিচার কাজে সরাসরি নিয়োজিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মোট ৬টি পদক দেওয়া হবে। এর মধ্যে জেলা ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, যুগ্ম জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, সিনিয়র সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি এবং সকল জেলার মধ্য থেকে একটি জেলা জজশীপ বা মহানগর দায়রা জজশীপ (দলগত) ১টি পদক দেওয়া হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী মনোনীত প্রতিটি পদের জন্য ২১ ক্যারেট মানের ১৬ গ্রাম ওজনের ১টি করে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রাম সংবলিত সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে। একই সাথে ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।

দলগত অবদানের ক্ষেত্রে একটি জেলা জজশীপ বা মহানগর দায়রা জজশীপে কর্মরত বিচারকগণ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার দলের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। দলের প্রত্যেক সদস্যকে পৃথকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হবে। আর দলগতভাবে ১টি পদক ও একটি ক্রেস্ট এবং নগদ ৫ লাখ টাকা সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বন্টন করা হবে।

পদক প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ১২ মাসের নিরবিচ্ছিন্ন বিচারিক কার্যক্রম বিবেচনায় নেওয়া হবে। প্রতিবছর ২০ আগস্টের মধ্যে পদকের জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা জজ ও সমপর্যায় এবং দলগত পর্যায়ের আবেদন জাজেজ কমিটিতে দাখিল করা হবে। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে আবেদন দাখিল করতে হবে ওইএকই সময়ের মধ্যে। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ চলবে। এরপর প্রধান বিচারপতি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনীতদের তালিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিবেন। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের সময় পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ও পদক প্রদান করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিচার বিভাগের সৎ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতি হয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি, আমাদের দেশে অধিকাংশ জুডিসিয়াল কর্মকর্তাই সৎ, মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার জন্য জন্য জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের শনাক্ত করব। আর তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপোষ থাকবে না।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমি একটি কমিটি করে দিয়েছি। যারা ভালো করবে তাদেরকে প্রত্যেক বছর ‘প্রধান বিচারপতি’ পদক দেওয়া হবে। এজন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নসহ বাছাই কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে জাজেস কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি নীতিমালা প্রণয়নসহ বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

সুপ্রিম কোর্টের ছয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত জাজেস কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।