শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে তার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ সংক্রান্ত এক আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে এ বিষয়ে পক্ষভূক্ত হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। পাশপাশি দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের আদেশও উপস্থাপন করা হয়।
পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের যে মামলাটি হাইকোর্ট স্থগিত করেছিলেন, সেটা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্ট দুই মাসের মধ্যে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তিনি জানান, এখানে কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে যিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন সেই রুল থাকা অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। এখন যিনি এই মামলার দায়িত্বে আছেন তার পক্ষে মামলাটি পরিচালনার জন্য একটি দরখাস্ত দাখিলের অনুমতি চেয়েছিলাম।
আইনজীবী খুরশীদ আলম আরো জানান, আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যেহেতু আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে দুই মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য। সেই আদেশের অনুলিপি আমরা আদালতের কাছে দাখিল করলাম।
আদালত হলফনামা করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী রুল শুনানি শুরু হয় বলেও জানান এই আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের নামে এ মামলা করেন। ড. ইউনূস ছাড়াও এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।
মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪ এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
পরে ওই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দিয়েছিলেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল ১৩ জুন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সময় পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, আইন অনুসারে শ্রমিক কর্মচারীদের বোনাস না দেওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়। পরে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ ধারায় (মামলা বাতিলের আবেদন) হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগ রুল জারি করে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। আর এই সময় পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।