মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবহেলা না করে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান।
আজ শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মেলন কক্ষে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান।
কনফারেন্সে সিভিল সার্জন ডাঃ চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ; অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়; বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার; সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ; পারিবারিক আদালতের সহকারী জজ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট; কোম্পানি কমান্ডার, র্যাব-৯, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প; জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক; অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর; ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার; জেল সুপার; বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সিলেট বন বিভাগের প্রতিনিধি রেঞ্জ কর্মকর্তা; সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি-এর প্রতিনিধি সহকারী পরিচালক; উপ-পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর; কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক; ইন্সপেক্টর, পিবিআই; ইন্সপেক্টর সি.আই.ডি; ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এবং জেলার বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জগণ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের শুরুতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের গুলিতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।
এরপর কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার। তিনি কনফারেন্সে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনক্রমে স্বাগত বক্তব্যে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন থানার মূলতবী পরোয়ানার বিবরণ তুলে ধরেন।
সাক্ষী মনিটরিং সেল স্থাপনের পর হতে আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতির হার ইত:পূর্বের চেয়ে ২৫/৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মৌলভীবাজার জেলার অধীনস্থ হাসপাতালগুলো হতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে প্রাপ্ত হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ উপস্থিত সকলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তবে, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সহ অন্যান্য কিছু সংস্থা অনেক মামলায় দীর্ঘদিন যাবত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না করায় ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ আগত বক্তাগণ এবং পরিবারিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও লেভি ওয়ারেন্ট দ্রুততার সাথে তামিল না হওয়ায় সহকারী জজ মোহাম্মদ আলমগীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অপরদিকে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় তাঁর বক্তব্যে দীর্ঘদিন যাবত তদন্তাধীন থাকা মামলাসমূহের গুরুত্বের সাথে দ্রুত তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের এবং পারিবারিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও লেভি ওয়ারেন্টসহ সকল পরোয়ানাসহ দ্রুততার সাথে তামিলের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার জনাব ডাঃ আহমদ ফয়সাল জামান তাঁদের বক্তব্যে মূলতবীকৃত মেডিকেল সার্টিফিকেট, পোর্স্ট মোর্টেম ও ভিসেরা রিপোর্ট এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা প্রতিবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ কিংবা আদালতে দাখিলের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ বদরুল হোসেন ইকবাল তাঁর বক্তব্যে আদালতে আগত সাক্ষী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের নিরাপত্তা বিধানসহ আদালত প্রাঙ্গণের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান পুলিশ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা আইনজীবী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন থানায় তদন্তাধীন থাকা মামলার তদন্ত কার্য দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করত: তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার, পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার, নিষ্পত্তির নিমিত্তে পি.আরমূলে জব্দ থানা মালখানায় থাকা আলামতের তালিকা তৈরি করে আদালতে প্রেরণ ও মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান বলেন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়।
সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান।