ঋণ খেলাপির দায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে মুক্ত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী মো. আবু তালেব।
তিনি জানান, আদালত ওই পরিবারের ১১ জনের পাসপোর্ট বা যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার শর্তে মুক্তির আদেশ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে বুধবার শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদের পাসপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়। আর র্যাবের কাছে বুধবার রাতে চারজনের পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয়। দু’জনের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১১টায় দুই বোন র্যাবের হেফাজত থেকে মুক্ত হন।
অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি আদালতে জানানোর পর আদালত বলেছেন, ১১ সদস্যের মধ্যে বাকি তিন সদস্য তাদের পরিবারের সদস্য কিনা কিংবা সদস্য হলে তাদের পাসপোর্ট আছে কিনা এ বিষয়ে আগামী সোমবারের (২৯ আগস্ট) মধ্যে হলফনামা দিতে হবে।
এর আগে বুধবার হাজির করার পর গ্রেফতারকৃত দুই বোন মুক্তি পাবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট বা এনআইডি কার্ড জমা দেওয়ার শর্ত দিয়েছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আর তাদের কাছে যে টাকাটা (১৯৬ কোটি ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬২ টাকা) পিপলস লিজিং পায়, তার ৫ শতাংশ ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
আদালতে দুই বোনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আবু তালেব। পিপলস লিজিংয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়। পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পরে ২০১ জন আমানতকারী একটি আবেদন করেছিলেন। আবেদনে তারা বলেছেন, পিপলস লিজিংকে রিভাইভ বা রিকনস্ট্রাক্ট করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য শোনার পর আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পিপলস লিজিং রিভাইভ করা হবে।
গত বছরের ২৮ জুন আদালত পিপলস লিজিং পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দিয়ে একটি বোর্ড গঠন করে দেন।
এরপর ঋণ খেলাপিদের আদালতে হাজির হতে বলেন। অনেকে হাজির হন। কিন্তু যারা হাজির হননি তাদের আটক করে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশ অনুসারে দুই বোনকে হাজির করা হয়।
এ দুই বোন প্রায় ২০ বছর ধরে কানাডায় অবস্থান করছেন। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন। বুধবার দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এর মধ্যেই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডি ও শ্যামলী এলাকা থেকে দুই বোন শারমিন ও তানিয়াকে আটক করে র্যাব।
সম্প্রতি দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ওরফে পিকে হালদার। তিনি দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের মধ্যে অন্যতম। গত ১৪ মে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পলাতক পি কে হালদার ভারতে গ্রেফতার হন।
খবির উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।