মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার সদর উপজেলার চাঞ্চল্যকর জিয়া উদ্দিন ফয়সাল হত্যা মামলায় ৪ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তদের প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের উপস্থিতিতে আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী গ্রামের নুরুচ্ছফার পুত্র রেজাউল করিম প্রকাশ বুইল্ল্যানির ছেলে (২০), মৃত আমান উল্লাহ’র পুত্র নুরুল হক (২২), মৃত অছিউর রহমানের পুত্র রমজান আলী (২৪) এবং মোঃ ইসহাকের পুত্র রুবেল (২০)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- একই এলাকার নুরুল আবছারের পুত্র শাহীন উদ্দিন (১৯) এবং দুদু মিয়ার পুত্র মনি আলম (১৯)।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী গ্রামের মোঃ নুরুল আনোয়ার এর পুত্র, কক্সবাজার ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র জিয়া উদ্দিন তার এলাকার মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ ও বিক্রিতে বাধা দিত।
এতে মাদক কারবারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী জামে মসজিদের উত্তর পাশে মাদক ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে জিয়া উদ্দিন ফয়সাল এর উপর সশস্ত্র হামলা করে।
এ হামলায় জিয়া উদ্দিন ফয়সাল গুরতর আহত হলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিয়া উদ্দিন ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় জিয়া উদ্দিন ফয়সাল এর পিতা মোঃ নুরুল আনোয়ার বাদী হয়ে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় ৯ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নম্বর : ৬২/২০১৭ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর ৪০৬/২০১৭ ইংরেজি (সদর) এবং এসটি মামলা নম্বর : এসটি মামলা নম্বর : ১২৮/২০১৮ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ও রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে জানান, এ হত্যা মামলাটি তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও), কক্সবাজার সদর মডেল থানার তৎকালীন এসআই কুতুব উদ্দিন খান ২০১৭ সালের ৪ জুলাই আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলাটি ২০১৮ সালের ১ মার্চ চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। চার্জশীটে এজাহারের ৯ জন আসামীর মধ্যে ৬ জনকে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্থ করে বিচার করতে এবং অবশিষ্ট ৩ জন আসামীকে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদেরকে মামলার দায় হতে বাদ দিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আদালতে প্রার্থনা করেন।
যে ৬ জন আসামীকে বিচারের জন্য চার্জশীটে আবেদন করা হয় তারা হলো : কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী গ্রামের নুরুচ্ছফার পুত্র রেজাউল করিম প্রকাশ বুইল্ল্যানির ছেলে (২০), মৃত আমান উল্লাহ’র পুত্র নুরুল হক (২২), মৃত অছিউর রহমানের পুত্র রমজান আলী (২৪), মোঃ ইসহাকের পুত্র রুবেল (২০), নুরুল আবছারের পুত্র শাহীন উদ্দিন (১৯) এবং দুদু মিয়ার পুত্র মনি আলম (১৯)।
মামলাটিতে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বুধবার উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।
রায়ের বিষয়ে পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে জানান, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির সাক্ষী, আলামত প্রদর্শন সহ বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আদালতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে পেরেছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।