মো. অলিউর রহমান : আইনানুযায়ী স্বামী যেমন স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, একইভাবে নির্দিষ্ট কিছু কারণে চাইলে স্ত্রীও স্বামীকে তালাক দিতে পারে। এ কথা সকলেরই জানা। তবে আজকের আলোচ্য বিষয় তালাক নয়, বরং দেনমোহর।
আমাদের সমাজে প্রায়ই দেনমোহর নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে ডিভোর্স দেন। তখন অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা হয় না। ধরে নেওয়া হয়, স্ত্রী যেহেতু নিজ ইচ্ছা থেকে এবং নিজ দায়িত্বে ডিভোর্স দিচ্ছেন সেজন্য তাকে দেনমোহরের টাকা না দিলেও হবে।
আসলে এই ধারণাটি চরম ভুল। এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত, যে-ই ডিভোর্স দেন না কেনো দেনমোহর অবশ্যই দিতে হবে। দেনমোহর বিয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত, ডিভোর্সের সঙ্গে নয়।
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কারণ দেনমোহর কে সবসময় স্বামীর ঋণ হিসাবে ধরা হয়। এমনকি স্বামীর মৃত্যু হলেও বকেয়া দেনমোহর একটি ঋণের মতো এবং এটি শোধ করতেই হবে।
স্বামীর মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি শোধ করবেন। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদায় করতে পারবেন। স্ত্রী যদি আগে মারা যান স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহরের দাবীদার হবেন। তারাও মামলা করার অধিকারী হবেন।
তবে কিছু কারণে “দেনমোহর” মওকুফ হতে পারে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো।
১। যদি বৈধ বিবাহ হয় এবং দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় কিন্তু যদি স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা দাম্পত্য ঘনিষ্ঠতা না পালন হয় সেক্ষেত্রে অর্ধেক দেনমোহর দিতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-
“আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তাহলে যে, মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে।” (আল কুরআন)
২। অনেকে ‘খুলা’ তালাকের কথা বলেছেন। ‘খুলা’ তালাক কি আপনাদের বুঝতে হবে, এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো-
ক) স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন, খ) স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন, গ) স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন।
তবে খুলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবেন না; কিন্তু তিনমাস ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
ফলে খুলা তালাকের ক্ষেত্রে পুরুষের “দেনমোহর” মওকুফের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে সেটা যে মওকুফ হবেই সেটা নয়। এখানে অবশ্যই দেখতে হবে যে স্ত্রী কি তার দেনমোহরের পরিবর্তে তালাকের প্রস্তাব করেছেন কিনা। কেননা দেনমোহর ছাড়াও অন্য কিছু প্রদানের প্রস্তাব দিয়েও স্ত্রী খুলা তালাক চাইতে পারেন।
দুইটি কারণে “দেনমোহর” নারী পাবেন না।
১। যদি বিয়েটা অনিয়মিত বিয়ে হয়।
২। যদি সহবাস না হয় এবং দেনমোহর নির্ধারিত না থাকে।
এগুলো আমাদের সমাজে চর্চা হয় না বলে, এগুলোর অপব্যাখা দেয়। নারীদের এসব বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া জরুরি।
লেখক : আইনজীবী