শাহজালাল ভুঁঞা (সবুজ) : আমরা জানি, আসমান ও জমিনের মধ্যে বা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে “স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক” হচ্ছে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, খোলা-মেলা বা পর্দাহীন এবং চির মধুর সম্পর্ক। যাহা কোন কালেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, পৃথিবীর সকল ধর্মেই ইহা একটি অবিচ্ছেদ্য মধুর সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, আইন অনুযায়ী এটি একটি দেওয়ানী চুক্তিও বটে।
নিঃসন্দেহে বলা যায়- পরিবার পরিচালনায় এবং পরিবার উন্নয়নে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। সেই সাথে দাম্পত্যজীবনেও একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোরান, হাদীস ও আইনের আলোকে প্রমাণিত হয় যে,
“বিবাহ মানেই, বৈধ পন্থায় দেওয়ানী চুক্তির দ্বারায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের যৌন চাহিদা মিটানোর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া এবং দাম্পত্যজীবনে উভয়ের প্রতি যাবতীয় অধিকার ও সকল দায়-দায়িত্ব অর্পণসহ বিশেষ বন্ধনের অপর নামই হচ্ছে- বিবাহ।” (1886) 8 ALL. 149. (P.L.D. 1967:S.C. 97.)
“According to Justice Sayid Mahmud, Marriage among Mohammadan’s is not a sacrament but purely a civil contract.” (বিচারপতি সাইদ মাহমুদের মতে, মুসলমানী আইন অনুসারে বিবাহ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নহে, বরং একটি দেওয়ানী চুক্তিও বটে)।
আমি বিশ্বাস করি, এই চির মধুর সম্পর্ক তখনই আরও বেশি গাড়, অটল ও আনন্দময় হয়, যখন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে সাংসারিক ছোট বড় যে কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা/ পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তাই চির সুখ শান্তির প্রত্যাশায় ছোট কিংবা বড় যে কোন বিষয়ে গোপন না রেখে একে অপরের নিকট তাহা প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন। এতে উভয়ের পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গা মজবুত হয়।
সম্পর্কে বিশ্বাস অতিশয় গুরুত্ব বহন করে। আজকাল বিশ্বাসের কারণে বহু সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটেছে। এছাড়াও আরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে- অহেতুক একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন বা খাটো করে কথা বলা। যাহা ধীরে ধীরে একটি দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। যেহেতু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক সেহেতু সংসারের বৃহত্তম স্বার্থে যৌক্তিকভাবে সকল ক্ষেত্রে উভয়জনকে আন্তরিকতার সহিত একমত হওয়া চাই। অন্যথায় হেয় বা অবহেলা করার দ্বারা ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হতে পারে মানষিক চাপ হিংসা-বিদ্বেষ ঘৃণা ও ক্ষোভ। সেই সাথে এটি চিরতরে আঘাত হানতে পারে দীর্ঘ ভালবাসার দুর্গে এবং মধুর সম্পর্কে। বিচ্ছিন্ন হতে পারে দাম্পত্য জীবন।
যাহোক, আইন অনুযায়ী এমন কিছু বিষয় রয়েছে যাতে স্ত্রীর অনুমতি আবশ্যক
দেনমোহর (Dower)
স্ত্রীকে কখনো দেনমোহর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটি তার ব্যক্তিগত অধিকার। সহবাসের আগে বা পরে স্ত্রী তার স্বামীর নিকট দেনমোহর দাবী করতে পারেন এবং এই অজুহাতে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে সহবাস করতে অস্বীকার করতে পারেন। (মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ ২১ ডিএলআর)। একই অজুহাতে স্ত্রী তার স্বামী থেকে দূরে অবস্থান করলেও স্বামী তা পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকবেন। (১১ ডিএলআর পৃষ্ঠা ১২৪)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
“তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশি মনে তার (মোহরের) কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর।” (সূরা নিসা, আয়াত ৪)
তবে জেনে রাখা উচিৎ, দেনমোহর দুই প্রকার:-
ক) তাৎক্ষণিক মোহর (Prompt Dower)
এটি এমন একটি মোহর, যা তালাকের পূর্বে, সহবাসের আগে বা পরে স্ত্রী চাওয়া মাত্রই স্বামী দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় তা আদায় করার লক্ষ্যে স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা করিতে পারবেন। তবে যদি বিবাহ বহাল থাকে, স্বামীর নিকট দেনমোহর দাবী করার তারিখ থেকে ৩বছরের মধ্যে স্ত্রী মামলা করিতে পারিবেন।
খ) বিলম্বিত মোহর (Deferred Dower)
এটি এমন একটি মোহর- যা Divorce বা তালাকের পরেই স্বামী পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। এই ক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের আগে উক্ত দেনমোহর আদায়ের লক্ষ্যে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে কোন মামলা করতে পারবেন না। শুধুমাত্র স্বামী মৃত্যুবরণ করলে অথবা স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হলে, মৃত্যু অথবা তালাকের তারিখ হতে তিন বছরের মধ্যে দেনমোহর পাওয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রী মামলা করতে পারবেন। স্ত্রী মৃতুবরণ করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ত্রীর পরিবর্তে তার সন্তানাদি দেনমোহর আদায়ের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় অথবা তালাকের পূর্বে স্ত্রীকে দেনমোহরের কোন অংশ পরিশোধ না করে থাকলে, স্বামীর মৃত্যু অথবা স্ত্রীকে তালাকের পর সম্পূর্ণ দেনমোহরের জন্য স্ত্রী মামলা করতে পারবেন।
তবে হ্যাঁ, উক্ত দুই প্রকারের কোন এক প্রকার কাবিন নামায় অবশ্যই লিখিত থাকতে হবে।
আইনের দৃষ্টিতে- যদি উল্লেখিত দুইটির কোন একটিও লিখা না থাকে তবে সেটি Prompt Dower হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে- যদি উল্লেখিত দুইটির কোন একটিও লিখা না থাকে তবে দেনমোহরের অর্ধেক পরিমাণ Prompt Dower হিসেবে এবং অবশিষ্ট অর্ধেক পরিমাণ Deferred Dower হিসেবে বিবেচিত হবে।
“সহবাসের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দেয়া হলে এবং দেনমোহর ধার্য থাকলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও পবিত্র কোরানের আইন অনুযায়ী স্ত্রী অর্ধেক দেনমোহরের মালিক হবে অথবা স্বামী তার স্ত্রীকে অর্ধেক মোহর পরিশোধ করবেন। আর মোহর ধার্য না থাকলে, স্ত্রী মোহরে মিসল পাবেন।” (সূরাহ আল-বাকারা, আয়াত ২৩৬-২৩৭)।
তবে সহবাসের পূর্বে স্বামী মৃতুবরণ করলে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্ত্রীকে সম্পূর্ণ দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।
আমি মনে করি দেনমোহর স্ত্রীদের একটি Absolute rights এবং ইহা বিবাহের একটি Integral part বা অবিচ্ছেদ্য অংশও বটে। কারণ বিবাহের ৫টি উপাদানের মধ্যে দেনমোহরের কথা উল্লেখ না থাকলেও সমাজে এমন কোন বিবাহ নেই, যে বিবাহে দেনমোহর নেই। তাই সহবাসের আগে বা পরে কিংবা সহবাস করে থাকলে তালাকের পরেও স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে আইন অনুযায়ী প্রত্যেক স্বামী বাধ্য। যাহা (দেনমোহর) মওকুফ করা আদালতের পক্ষেও অসম্ভব। স্বয়ং স্ত্রী ব্যতীত তার মাতা-পিতাও দেনমোহর মওকুফ করিতে পারবেন না।
ভরণপোষণ
স্ত্রীকে ভরণপোষণ দেয়া থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না। এটাও তার ব্যক্তিগত অধিকার। স্ত্রী যতদিন তার স্বামীর আস্থাভাজন থাকবেন এবং স্বামীর ন্যায়সংগত আদেশ পালন করবেন, ততদিন স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিবেন। তবে স্ত্রী যদি কোন যুক্তিসংগত কারণে স্বামী থেকে দূরে বসবাস করেন তবুও স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন। (মো. ইব্রাহিম হোসেন সরকার বনাম মোসা. সোলেমান্নেসা (১৯৬৭,১৯ ডিএলআর পৃষ্ঠা ৭৫২)।
কিন্তু যে স্ত্রী কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত স্বামীর সাথে যৌন-সঙ্গমে অস্বীকার করবে অথবা স্বামীর অবাধ্য হবে, সে স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবে না। (1935) 160 I.C. 365. / (1896) Bom.77; (1942) Kar. 535.
তবে স্বামীর নিষ্ঠুর আচরণের কারণে স্ত্রী স্বামীর গৃহ ত্যাগ করলে, সে ক্ষেত্রে স্বামী ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। (’56) A. Raj. 102.
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “ধনী ব্যাক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং গরিব ব্যাক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা কর্তব্য”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত- ২৩৬)।
সন্তানকে মায়ের কাছে রাখার অধিকার
বিয়ে বলবৎ থাকুক বা না থাকুক সন্তানকে যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত তার মায়ের থেকে দূরে রাখা যাবে না। বিয়ে বলবৎ না থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানকে তার মায়ের কাছে রাখতে হবে এবং সেই সাথে সন্তানের ভরণপোষণ হিসেবে প্রতিমাসে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।
“(আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এস এম এ বকর ৩৮ ডিএলআর)” এর মামলায় এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, যদি আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়, সন্তান তার মায়ের নিকট বা হেফাজতে থাকলে তার শারিরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে সন্তানের কল্যাণ ও স্বার্থ রক্ষা হবে, সে ক্ষেত্রে আদালত সন্তানের নির্দিষ্ট বয়সের পরেও তার মা কে সন্তানের জিম্মাদার হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন।
স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট বাসা, জমি বা স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়
স্ত্রীর নামে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করা বা না করা এটা সম্পূর্ণ স্বামীর এখতিয়ার, বিক্রি করা নয়। তবে স্ত্রীর নামে ক্রয় করা ফ্ল্যাট বা জমি বিক্রি করতে হলে স্ত্রীর অনুমতি আবশ্যক অথবা স্ত্রী তার স্বামীকে “আমমোক্তারের মাধ্যমে” বিক্রি করার অনুমতি প্রদান করতে হবে।
আর সে ক্ষেত্রে আমমোক্তার অবশ্যই আইন অনুযায়ী সম্পাদন করতে হবে। জেনে রাখা চাই, স্ত্রীকে স্বর্ণালঙ্কার বা টাকা পয়সা কোন কিছু উপহার দিয়ে থাকলে তার মালিক স্বয়ং স্ত্রী। তাই তার অনুমতি ছাড়া তার কোন সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।
স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্ট বা ডিপিএস খুলে টাকা জমা রাখা
স্বামী চাইলে তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্ট বা ডিপিএস খুলে টাকা জমা রাখতে পারেন, এটা নিশ্চয়ই স্বামীর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে স্ত্রীর নামে টাকা জমা রাখার পর, স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত স্বামী উক্ত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। যদিও টাকা স্বামীর, তবে সেটি জমা রাখার আগ পর্যন্ত। আর টাকা জমা রাখার পর তার মালিক হবেন স্ত্রী এবং উত্তোলনও করবেন স্ত্রী।
স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত সকল সম্পত্তি উইল করা যাবে না
যদিও সকল স্থাবর সম্পত্তির মালিক স্বামী। তবুও তার স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত স্বামী তার সকল স্থাবর সম্পত্তি উইল করতে পারবেন না। কারণ স্ত্রী হচ্ছে তার উত্তরাধিকারী।
স্ত্রী অনুমতি ছাড়া বিয়ে করা
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় ২য় বিবাহ করা যাবেনা। ২য় বিবাহ করতে হলে, অবশ্যই ১ম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অনুমতির ক্ষেত্রে অবশ্যই ১ম স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন, সেই এলাকার শালিসি পরিষদের নিকট ২য় বিবাহের অনুমতি চেয়ে স্বামী আবেদন করতে হবে। শালিসি পরিষদের মাধ্যমে ১ম স্ত্রী ২য় বিবাহের জন্য অনুমতি প্রদান না করলে, স্বামী কোন প্রকারেই ২য় বিবাহ করতে পারবেন না।
স্বামী আইন অমান্য করে ২য় বিবাহ করলে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) এর ধারা অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ সৃষ্টি হবে। স্বামী ১ম স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত ২য় বিবাহ করিলে, স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারক অপরাধীকে ১বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করিতে পারেন।
আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে- আইন অনুযায়ী স্বামী ১ম স্ত্রীর অনুমতি স্বাপেক্ষে ২য় বিবাহ করলেও ২য় স্ত্রীর নিকট ১ম বিবাহের কথা গোপন করতে পারবেন না, করলে দন্ডবিধি অনুযায়ী স্বামীকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ২য়/বহু বিবাহ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন,
“আর তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, পিতৃহীনাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমাদের পছন্দ হয়; দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে বিবাহ কর অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (ক্রীত অথবা যুদ্ধবন্দিনী) দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী।” (সূরাহ নিসা, আয়াত ৩)।
ক) উক্ত আয়াতে কারীমের তাফসীর- হযরত আয়েশা (রাঃ) এইভাবে বর্ণানা করেছেন যে, “বিত্তশালিনী এবং রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ইয়াতীম কন্যা” কোন তত্ত্বাবধায়কের তত্ত্বাবধানে থাকলে, সে তার মাল ও সৌন্দর্য দেখে তাকে বিবাহ করে নিত, কিন্তু তাকে অন্য নারীদের ন্যায়সঙ্গত মোহর দিত না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এই রকম অবিচার করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা ঘরের ইয়াতীম মেয়েদের সাথে সুবিচার করতে না পার, তবে তাদেরকে বিবাহই করবে না। অন্য মেয়েদের কে বিবাহ করার পথ তোমাদের জন্য খোলা আছে। (সহীহ বুখারী- ২৪৯৪ নং)
এমনকি একের পরিবর্তে দুই জন, তিন জন এবং চার জন পর্যন্ত মেয়েকে তোমরা বিবাহ করতে পার। তবে শর্ত হল, তাদের মধ্যে সুবিচারের দাবী যেন পূরণ করতে পার। সুবিচার করতে না পারলে, এক জনকেই বিয়ে কর অথবা অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসীকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাক।
খ) ইসলামিক বিধি-বিধান অনুযায়ী, কোন পুরুষ প্রয়োজনবোধ করলে একাধিক বিবাহ করতে পারে। তবে তাকে অবশ্যই শারীরিকভাবে সক্ষম এবং আর্থিকভাবে সামর্থবান হতে হবে। সেই সাথে একাধিক স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার বজায় রাখা আবশ্যক। তবে একজন পুরুষের জন্য একাধিক বিবাহ করা যত সহজ, তাদের মধ্যে সুবিচার বজায় রাখা ততটা সহজ নয়। তাই আল্লাহ তা’য়ালা অন্যত্রে বলেন-
“তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা কর, একাধিক স্ত্রী-দের মাঝে কখনো ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখতে পারবে না। তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অন্যজনকে ঝোলানো অবস্থায় ছেড়ে দিওনা” (সূরাহ নিসা, আয়াত ১২৯)।
রসূল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তির দু’টি স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তন্মধ্যে একটির দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কেয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।” (আহমদ ২/৩৪৭, আসহাবে সুনান, হাকেম ২/১৮৬, ইবনে হিব্বান ৪১৯৪ নং)।
স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী দীর্ঘদিন বাহিরে অবস্থান করা
আইনের দৃষ্টিতে, কোন ন্যায়সংগত কারণ ব্যতীত স্ত্রীর অমতে স্বামীর দীর্ঘদিন বাহিরে থাকা যাবে না। এ বিষয়ে স্বামীদেরকে ইসলামী বিধান সর্বোচ্চ চার মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে উক্ত চার মাসের মধ্যে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করে নেওয়া।
“যারা নিজেদের স্ত্রী-দের কাছে না যাওয়ার শপথ করে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। যদি তারা এ থেকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। আর যদি তারা স্বীয় স্ত্রী-কে তালাক দেওয়ারই সংকল্প করে, তাহলে আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।” (সূরাহ আল-বাকারা, আয়াত ২২৬-২২৭)।
লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, ফেনী-চট্টগ্রাম।