একই আদেশের বিরুদ্ধে দুই আবেদন, আইনজীবীকে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

এসিড সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড না দিলে বিচারের নামে তামাশা হবে : সুপ্রিম কোর্ট

এসিড সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড না দিলে বিচারের নামে তামাশা হবে বলে অভিমত দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্ত্রীকে এসিড নিক্ষেপের দায়ে স্বামী আকবর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ঘোষিত রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।

সম্প্রতি ১০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী রায় প্রকাশের তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

একজন তরুণীর ওপর এসিড নিক্ষেপ শুধু অমানবিকই নয়, এটা বর্বর ও ঘৃণ্য অপরাধ উল্লেখ করে রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, কোনো সভ্য সমাজ এ ধরনের অপরাধ মেনে নিতে পারে না। এই এসিড সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড না দিলে বিচারের নামে তামাশা হবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার সারাজীবন যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যায় তা টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। আপিল বিভাগ আশা করছে, এ ধরনের সাজায় অ্যাসিড ছোড়ার মতো গুরুতর অপরাধ কমবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, এই মামলায় ১৮ বছরের একজন তরুণীর ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটা শুধু ভয়ঙ্করই নয়, হত্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এসিড সন্ত্রাসের কারণে ভিকটিমের মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শরীরের এই ক্ষত তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এই ক্ষত তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। যখন একজন নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন তখন সেই অপরাধ শুধু সমাজের বৃহত্তর অংশ কেন ভিকটিমের বাবা, মা, বোন, ভাই কেউ তা মেনে নিতে পারেন না।

এসব কারণে আদালত আপিলকারী আকবর আলী ওরফে জেলহক মন্ডলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। যদি আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে তার আপিল গ্রহণ করা হয় তাহলে তা বিচারের নামে তামশা হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।

২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আকবর আলীর সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আকবর আলী ফের সৌদি আরব চলে যান। এর কয়েকমাস পর দেশে ফিরে স্ত্রীকে সৌদি আরব নিয়ে যেতে চাইলে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ হয়।

এ ঘটনার জেরে ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে স্ত্রীর গায়ে আকবর আলী এসিড ঢেলে দেয়। এরপর আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের বাবা একই উপজেলার বড় বাসুরিয়া গ্রামের মো. আব্দুল আউয়াল শেখ শাহজাদপুর থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় ২০০৯ সালে আত্মসমর্পণ করেন আকবর আলী। এরপর সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচার শেষে ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট এসিড অপরাধ দমন আইনের ৫(ক) ধারায় আকবর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামির আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আকবর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি আসামি আপিল বিভাগে আপিল করেন। পরে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়।