মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে চট্টগ্রামের মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী মজুমদারকে হত্যা মামলায় তিন আসামির ফাঁসি বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জুনায়েদ রিয়াদ, জাহিদুল ইসলাম শাওন ও মাহাবুব আলী ড্যানি। খালাস পাওয়া দুইজন হলেন- শাহাদাত হোসেন সাজু ও শাহ সেলিম ওরফে টিপু।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. হারুন অর রশীদ, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরু, মিজানুর রহমান খান, মো. আলতাফ হোসেন আমানী ও হুমায়ূন কবির। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ, মোহাম্মদ ইয়াছির সিকদার, মো. কামাল পারভেজ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে নিয়ে যায় আসামি শাওন, রিয়াদসহ কয়েকজন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য ‘এ’ লেভেল পাস করা হিমুর বয়স তখন ১৮ বছর।
আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ছাদ থেকে।
হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছরের ২৩ মে মৃত্যু হয় হিমুর। ওই ঘটনায় হিমুর মামা শ্রী প্রকাশ দাশ বাদী হয়ে শাওন, রিয়াদ, সাজু, ড্যানি ও রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপুকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
এরপর অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ, উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানিসহ সকল বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ১৪ অগাস্ট চাঞ্চল্যকর এ মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম।
পরে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের নিয়ম অনুযায়ী ওই বছরই মামলার সব নথিপত্র আসে হাইকোর্টে। এদিকে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিরা। দীর্ঘদিন পর এ মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিল উচ্চ আদালত।