মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগকে সামগ্রিকভাবে আরো সেবা বান্ধব করতে, মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে পুলিশ প্রশাসন, প্রসিকিউসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, আইনজীবী, সিভিল প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। যাতে মামলার জট কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা যায়। প্রকৃত অপরাধীদের সাজা দেওয়া যায়। মামলার জট কিছুটা হলেও কমানো যায়। নিরীহ মানুষ মামলার বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পায়। বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা আরো বাড়ে। সমাজকে স্থিতিশীল রাখা যায়। তাহলেই বিচার বিভাগ কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির স্বাগত ভাষনে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল একথা বলেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে শনিবার (১২ নভেম্বর) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহাসনুল ইসলাম ও সিনিয়র সহকারী জজ সায়মা আফরিন হীমা’র সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিচারকদের মধ্যে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোসলেহ উদ্দিন, ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) নুরে আলম, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-২ মোহাম্মদ সাইফুল এলাহী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ মোহাম্মদ আবদুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-৪ মো: মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-৫ নিশাত সুলতানা, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ভা:) রাজিব কুমার বিশ্বাস, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-২ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকী, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা, মোহাম্মদ সাঈদীন নাহী, আখতার জাবেদ, চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহেদ হোসাইন, চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জিয়া উদ্দিন, রামু’র সিনিয়র সহকারী জজ মো: মাজেদ হোসাইন, টেকনাফের সিনিয়র সহকারী জজ ওমর ফারুক, কুতুবদিয়ার সিনিয়র সহকারী জজ ফাহমিদা সাত্তার, মহেশখালীর সহকারী জজ আবদুল মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম সরকার, পিবিআই এর এসপি মোঃ সরোয়ার আলম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান, কক্সবাজারের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোঃ আলমগীর, সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নুরুল আমিন, জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মুহাম্মদ আশিকুর রহমান, জেল সুপার শাহ আলম খান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মোঃ সরওয়ার আলম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) মোঃ আনোয়ার হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের ডিডি মোহাম্মদ রুহুল আমিন, গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা তুষার আহমদ, কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডার মোঃ শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার মিজানুর রহমান সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ সম্মেলন ও আলোচনায় অংশ নেন।
বিভিন্ন থানার কর্মকর্তাদের মধ্যে, সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, রামু থানার ওসি আনোয়ারুল হোসাইন, টেকনাফের ওসি আবদুল হালিম, উখিয়ার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী, চকরিয়ার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, ঈদগাঁহের ওসি গোলাম কবির, পেকুয়ার ওসি ফরহাদ আলী, মহেশখালীর ওসি (তদন্ত) আবদুর রাাজ্জাক মীর, কোর্ট ইন্সপেক্টর মোঃ সরওয়ার আলম, মালখানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিন কাদের খাঁন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া প্রসিকিউসন ও আইনজীবী সমিতির পক্ষে, জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, স্পেশাল পিপি-১ অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার, স্পেশাল পিপি-২ অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও স্পেশাল পিপি-৩ অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা, দুদকের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম ও অ্যাডভোকেট সিরাজ উল্লাহ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম, এপিপি অ্যাডভোকেট আহমদ কবির, এপিপি অ্যাডভোকেট খালেক নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ও আলোচনায় অংশ নেন। তাছাড়া সম্মেলনে আরো বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির ভাষনে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, মামলা গ্রহণের সময় অযাচিত, নিরীহ মানুষকে আসামী করায় মামলায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব হয়। প্রকৃত অপরাধীরা কৌশলে এর সুযোগ নিয়ে নেয়। তাই ঘটনার সাথে জড়িত নয়, এমন লোকদের মামলায় আসামী করা থেকে বিরত থাকতে তিনি থানা কর্তৃপক্ষককে নির্দেশনা দেন। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দায়িত্বশীলতা, নিষ্ঠা, সততা ও পেশাদারিত্বের সাথে মামলা তদন্ত করে দ্রুততম ও আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, মামলা দায়ের হয়ে, চার্জশীট হওয়া থেকে মামলাটি বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতে আসা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে দীর্ঘ সূত্রীতা পরিহার করতে হবে। নাহয়, বিচারপ্রার্থীরা সেবা বঞ্চিত হবে, ন্যায় বিচার ব্যাহত হবে। যা কখনো কাম্য নয়।
সম্মেলনের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন সহকারী জজ আবদুল মান্নান, গীতা পাঠ করেন কুতুবদিয়া সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার প্রদীপ কান্তি চক্রবর্তী, ত্রিপিটক পাঠ করেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বেঞ্চ সহকারী সেতু বড়ুয়া।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আববাস উদ্দিন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে ২ পর্বে বিচার বিভাগীয় এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর সভাপতির স্বাগত ভাষনের পর দেওয়ানী ও ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার নিষ্পত্তিতে উদ্ভূত সমস্যা ও বিলম্বের কারণ সমুহ চিহ্নিতকরণ এবং উল্লেখিত সমস্যা হতে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে আমন্ত্রিত অতিথি সহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের উম্মুক্ত আলোচনা এবং সুপারিশমালা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রথম পর্ব দুপুর ২টায় সমাপ্ত হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আববাস উদ্দিন আরো জানান, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় শনিবার বেলা আড়াইটায়। এ পর্ব শুধুমাত্র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন বিকেলে সভাপতির সমাপনী ভাষনের মাধ্যমে দিনব্যাপী এই বিচার বিভাগীয় সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।