মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগে গত ৮ মাসে সাড়ে ৭ কোটি টাকার জামানতের অর্থ আদায় করা হয়েছে। উচ্চ আদালত ও কক্সবাজার বিচার বিভাগের ৭ টি আদালতে জামিন পাওয়া আসামীদের জামিনের শর্তস্বরূপ আসামীদের কাছ থেকে জামানতের এ অর্থ আদায় করে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ তথ্য প্রকাশ করেন। কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে গত ১২ নভেম্বর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো জানান, চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়েছে। মামলা গুলোর মধ্যে বেশীরভাগই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, জামিনপ্রাপ্ত আসামী জামিন পাওয়ার পর পলাতক হলে জামানত বাবদ রাষ্ট্রের কোষাগারে জমাকৃত অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। মামলা নিষ্পত্তির পর আসামী খালাস পেলে জামানতের অর্থ সংশ্লিষ্ট আসামীকে ফেরত প্রদান করা হবে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশকে জানান, আদায়কৃত জামানতের অর্থের মধ্যে এই বিধানে জামিন প্রাপ্ত আসামী আদালতে জামিননামা দাখিল করার সাথে জামানতের অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা করে জমা করার চালানের কপি জামিননামার সাথে আদালতে দাখিল করতে হয়। জামিনপ্রাপ্ত আসামীদের অধিকাংশই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে জামিননামা সম্পাদনের সময় প্রচুর পরিমাণে জামানতের অর্থ আদায় করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ আসামীকে জামিন প্রদানের অন্যান্য শর্তের সাথে জামানত নেওয়ার বিধানটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে জানান। তিনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশকে বলেন, এ বিধানের ফলে বিচারাধীন মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক হওয়ার আশংকা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
এতে একদিকে, রাষ্ট্রের কোষাগার সমৃদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে, মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতকে অহেতুক বিড়ম্বনা পোহাতে হবেনা, অপেক্ষাকৃত কম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে বলেও জানান পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম। তাছাড়া রাষ্ট্র ও জাতির শত্রু মাদকপাচারকারীরা আতংকিত হবে মন্তব্য করেন তিনি।
জামিনপ্রাপ্ত আসামীরা জামিন নিয়ে যাতে পলাতক না হয়, সেজন্য সম্প্রতি কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আইনের বিধান মতে আসামীদের কাছ থেকে জামানতের অর্থ নেওয়ার এ যুগান্তকারী বিধানটি চালু করেন। উল্লেখিত সময়ে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ ৭টি আদালতে আসামীদের কাছ থেকে এ জামানতের অর্থ আদায় করা হয়েছে।
এদিকে, আসামীদের জামিনের শর্তস্বরূপ আসামীদের কাছ থেকে জামানতের অর্থ নেওয়ার বিধানটি মডেল হিসাবে নিয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালত। কক্সবাজারের আদালতকে অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন আদালতেও এখন নগদ জামানতের অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করার শর্ত দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।