ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রবেশপথের ফটকে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। অন্যান্য দিন এসব প্রবেশপথগুলোর ফটক খোলা থাকে। তবে আজ প্রবেশপথের মূল ফটকে তালা মেরে কেবলমাত্র পকেটে গেট খোলা রাখা হয়েছে।
পালিয়ে যাওয়া দুজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। যার পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়।
আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পর হয়তো পুলিশ আদালত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। দুদিন যেতে না যেতেই আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে।
সরেজমিনে আদালত চত্বরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিন ঢাকার আদালত চত্বরে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানসহ অন্যান্য দোকান বসলেও সেটি আজ দেখা যায়নি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের উল্টো দিক দিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ঢোকার পথে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছোট পকেট গেট দিয়ে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ ঢুকছেন।
দুই জঙ্গির পলায়ন
গতকাল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা যখন (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাঁদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরাও পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেন।
পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাঁদের ওপর হামলা এবং স্প্রে ছিটিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেন সহযোগীরা।
পালানোর চেষ্টা করা দুই জঙ্গিসহ রিমান্ডে ১০
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের ফটকের সামনে থেকে রোববার দুপুরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০ জনের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিমান্ডে নেওয়া ১০ আসামি হলেন শাহীন আলম ওরফে কামাল, শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন, বি এম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, আরাফাত রহমান, খাইরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, শেখ আবদুল্লাহ, আবদুর সবুর ও রশিদ উন্নবী ভূঁইয়া।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশ। তাতে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির, মো. আবু ছিদ্দিক সোহেলসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে আরাফাত রহমান ও আবদুর সবুরও দুপুরে ওই দুজনের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁরা সফল হননি। তাঁরাসহ গ্রেপ্তার ১০ জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। তাঁদের ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।