ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জেলা আদালতে কর্মরত বিচারকদের মধ্যে “অধীনতার” অনুভূতি পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের উচিত জেলা বিচার বিভাগকে ‘অধস্তন’ বিচার বিভাগ হিসেবে দেখার মানসিকতা পরিবর্তন করা।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গত ১৪ নভেম্বর বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন: “আমি মনে করি আমরা পরাধীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি। আমরা আমাদের জেলা বিচার বিভাগকে ‘অধস্তন বিচার বিভাগ’ বলে থাকি। আমি সচেতনভাবে চেষ্টা করি যাতে জেলা পর্যায়ের জজদের অধস্তন বিচারক না বলা যায়। কারণ তারা অধস্তন নন। তারা জেলা বিচার বিভাগের অন্তর্গত”।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা অনেক জায়গায় একটা কনভেনশন (প্রথা) হয়ে গেছে যে, হাইকোর্টের বিচারপতিরা যখন লাঞ্চ বা ডিনার করবেন তখন জেলা আদালতের জজরা দাঁড়াবেন। অনেক সময় খোদ জেলা জজরা হাইকোর্টের বিচারকদের খাবার পরিবেশনের চেষ্টা করেন।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, তিনি যখনই জেলা আদালতে যেতেন, তিনি জোর দিয়েছিলেন যে তিনি খাবার খাবেন না, যদি না জেলা বিচারকরাও তাঁর সাথে একই টেবিলে খেতে বসেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় জেলা জজরা হাইকোর্টের বিচারকদের সামনে বসার সাহস পান না যখন তাদের বৈঠকের জন্য ডাকা হয়। এমন নজিরও আছে যখন প্রধান বিচারপতি ভ্রমণ করেন এবং কোনো জেলা অতিক্রম করেন, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা তখন জেলার সীমানায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতেন। এই ধরনের উদাহরণ আমাদের ‘ঔপনিবেশিক’ মানসিকতার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“এই সব পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের আরও আধুনিক ও সমতাপূর্ণ বিচারব্যবস্থার দিকে যেতে হবে” তিনি বলেছেন।
“শুধুমাত্র জেলা বিচার বিভাগের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য বড় কিছু করা যথেষ্ট নয়, বরং উচ্চ আদালতের বিচারকরা আমাদের জেলা বিচার বিভাগকে কীভাবে দেখেন, আমরা তাদের কীভাবে ধারণ করি এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। জেলা বিচার বিভাগই হলো বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু ও বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি। জেলা বিচার বিভাগের বিচারকদের মধ্যে আত্ম-মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে”, তিনি বলেন।
প্রধান বিচারপতি আর যোগ করেন যে, প্রশাসনের একজন তরুণ কর্মকর্তা কিন্তু তার সিনিয়রকে হীনমন্যতাবোধের সাথে দেখেন না এবং তাদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়াটি সমতাবোধের সঙ্গে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থায়ও বর্তমানে প্রজন্মগত পরিবর্তন হচ্ছে, আরও বেশি সংখ্যক তরুণ এতে যোগ দিচ্ছে। তিনি স্মরণ করেন যে, পুরানো প্রজন্মের বিচারকরা যখনই তার সাথে যোগাযোগ করতেন, তারা প্রতি বাক্যে “হানজি স্যার” যোগ করে মুখে ফেনা তুলতেন। কিন্তু আশার ব্যাপার হলো, তরুণ বিচারকরা বর্তমানে সমতাবোধ বজায় রেখেই যোগাযোগ করে।
“তরুণ বিচারকরা সমতাবোধের সাথে কথা বলে। এটি নির্দেশ করে যে, ভারত কোন দিকে যাচ্ছে। তরুণরা পুরাতনদের তুলনায় শিক্ষিত, উজ্জ্বল, আত্মবিশ্বাসী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং আত্মমূল্যবোধের অধিকারী”।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, বিচার বিভাগে অনেক বেশি নারী বিচারক যোগদান করছে এবং “প্রজন্মগত এবং জনসংখ্যাগত এই পরিবর্তন” বিচারব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে।
তিনি বলেন, “আমাদের যদি পরিবর্তন করতেই হয়, আমাদের প্রথমেই জেলা বিচার বিভাগের চেহারা পরিবর্তন করতে হবে”।
সূত্র: লাইভ ল