পারিবারিক আইনের ব্যবহারিক সংস্কার চান বিশেষজ্ঞরা
“পারিবারিক আদালত ও আইনের সংস্কার” শীর্ষক সেমিনার

পারিবারিক আইনের ব্যবহারিক সংস্কার চান বিশেষজ্ঞরা

পারিবারিক আইনের ব্যবহারিক সংস্কারের মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আলোচকরা বলেন, পারিবারিক আদালত ও আইন অনেক পুরাতন হওয়ায় মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরাতন প্রথা ও পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমান সমসাময়িক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আইনজীবীসহ বিচারকদের। এ কারণে পারিবারিক আইনটির ব্যবহারিক সংস্কার প্রয়োজন।

রাজধানীর বনানী ক্লাবে আয়োজিত “পারিবারিক আদালত ও আইনের সংস্কার” শীর্ষক সেমিনারে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এ মতামত তুলে ধরেন বিচারক ও আইনজীবীরা। ফাউন্ডেশন ফর ল’ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্লাড) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, পারিবারিক আদালতে সব ধরণের সেক্টর রয়েছে- যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, যৌতুক নিরোধ আইন, পারিবারিক সহিংসতা আইনসহ পারিবারিক মামলাগুলো বিচারের জন্য একই ছাদের নিচে আনার ব্যবস্থা করা দরকার। যেন আইনটি আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, চাইল্ড পেরেন্টাল এব্‌ডাকশন যেন না হয় তার জন্য বাচ্চাদের পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন পুলিশ অথবা আদালতের কাছে দিয়ে তারপর অভিভাবকত্ব বিষয়ক পারিবারিক মামলা পরিচালনা করা প্রয়োজন। বাচ্চাদের আলাদা রুমে নিয়ে শান্তভাবে এবং কমফোর্টেবল রেখে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে জবানবন্দী নেওয়া উচিত।

সেমিনারে পারিবারিক মামলার আপিলের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া। এ বিচারক প্রশ্ন তুলেন, একটি দেনমোহরের আপিল শুনানি কিভাবে সম্ভব, যেখানে দেনমোহরের পরিমাণ বিয়ের সময়ই দুই পক্ষের সম্মতিতে ঠিক হয়।

তিনি আরও বলেন, একটি পারিবারিক মামলা দীর্ঘকালীন পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাবালক শিশু। তিনি পারিবারিক মামলা আইনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে শেষ করার তাগিদ দেন।

পারিবারিক আদালতের বিচারক ফারিহা নোশীন বর্ণী বলেন, পারিবারিক আদালতের ডিজিটাল এভিডেন্স নেওয়ার জন্য আদালতের কোর্ট রুমগুলোকে আরো ডিজিটালাইজড করা অর্থাৎ কম্পিউটার বা পাওয়ার পয়েন্ট স্ক্রিন লাগানোর ব্যবস্থা করা দরকার।

পারিবারিক আদালতের আরেক বিচারক দুরদানা রহমান বলেন, ফ্যামিলি কোর্টে কিভাবে প্র্যাকটিস করা দরকার বা পারিবারিক মামলাগুলো কিভাবে পরিচালনা করা দরকার তার জন্য আইনজীবীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

কী-নোট স্পিকার অ্যাডভোকেট মলয় সাহা বলেন, পারিবারিক আইন অনেক সনাতন আইন এবং তা সংস্কার হিসেবে সময়ের সাথে এগিয়ে আমাদের হিন্দু পারিবারিক আইন এ তালাকের বিধান আনা অতীব জরুরি। আর ফ্যামিলি কোর্টে ডিক্রি জারির পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম বলেন, বাবা মাকে একটি এডভার্সারিয়াল সিস্টেমে পারিবারিক আইন ঠেলে দিচ্ছে যা তাদের শিশুদের মঙ্গল কামনার চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য তিনি একটি আইনি পদ্ধতির প্রস্তাব দেন। যেখানে আর্জি দাখিলের দিনই বাধ্যতামূলক আপোষের জন্যে আদালত দুই পক্ষকে পাঠাবেন এবং সেই আপোষে যদি কোন ব্যক্তি না যেতে চান তবে তাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ফ্লাড সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাউজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, দেনমোহর ও ভরণ-পোষণের মামলার প্রথমেই রিটেন স্টেটমেন্টে ছেলে কতটুকু দেনমোহর দিয়েছে, পরিশোধ করেছে তা উল্লেখ করার দরকার এবং ততটুকু পরিমাণ পরিশোধের পরেই মামলা পরিচালনা শুরু করা উচিত।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন ফ্লাডের লিগ্যাল এইড সেক্টরের পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম।

উপস্থিত ছিলেন ফ্লাড সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট হাসিনা রশিদ। এছাড়াও সেমিনারে আইনজীবী, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, লাইটহাউজ, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, সাইকিউর, মমস ফর মম, ইসরাত ফাউন্ডেশন, ইউএস এম্বাসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।