স্ত্রীর করা যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় রংপুরের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পিতার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এসময় আসামিরা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। আসামিদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বাজার পূর্ব গ্রামে। বর্তমানে ওই বিচারক আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আমাদের কিছুটা অসংগতি মনে হয়েছিল। সেজন্য বাদীর পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে।
আদালত পিবিআইয়ের কাছে সেই অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। পিবিআই আদালতের কাছে তাদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাদীর নারাজির আংশিক গ্রহণ করেন বলেও জানান রফিক হাসনাইন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, ‘আদালতে সাক্ষী ও আলামতের আলোকে পুলিশ একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বাদী নারাজি দিয়েছেন। তাই আদালত আমাকে ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ডেকেছিল। এটি বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের পয়লা মে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উত্তর খয়ড়াকুড়ি গ্রামের নারায়ণ সরকারের মেয়ে ডা. হৃদিতা সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় হালুয়াঘাট বাজারের সুধাংশু কুমারের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের। বিয়ের আসরেই ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন দেবাংশু ও তার পরিবারের লোকজন।
এ ঘটনায় ওই সময় বিয়ে ভাঙার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন গাড়ি কেনার জন্য দেবাংশু কুমার সরকার আবারও যৌতুক দাবি করে নানা ধরনের চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে হৃদিতা তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এরই মধ্যে হৃদিতা জানতে পারেন তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৭ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে হৃদিতা বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার (৬০), ফুপাত ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকারে বিরুদ্ধে (৫) মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী ও তার বাবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।