মোকাররামুছ সাকলান : The Representation of the People Order, 1972 অনুযায়ী “office of profit” means holding any office, post or position in the full-time service of the Republic or any statutory public authority or company in which government has more than 50% (fifty percent) share.
অন্যদিকে “Service of the Republic” বা “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার-সংক্রান্ত যে কোন কর্ম, চাকুরী বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলিয়া ঘোষিত হইতে পারে, এইরূপ অন্য কোন কর্ম;
কয়েকটি বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদটা লাভজনক পদ তবে এটা প্রজাতন্ত্রের কর্মের জন্য লাভজনক পদ নয়। ৪৯ ডি.এল.আর (হাইকোর্ট) পৃষ্ঠা ১ দ্রষ্টব্য।
কিন্তু আমার কাছে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটা হলো রাষ্ট্রপতি পদটা “প্রজাতন্ত্রের কর্মের” কোন পদ কিনা?
অনুচ্ছেদ ১৫২ বলছে “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার-সংক্রান্ত যে কোন কর্ম, চাকুরী বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলিয়া ঘোষিত হইতে পারে, এইরূপ অন্য কোন কর্ম;
এই সংজ্ঞায় গুরুত্বপূর্ণ হলো “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” হতে হবে বাংলাদেশ সরকার সংক্রান্ত যেকোন চাকুরী বা পদ। এখানে উল্লেখযোগ্য হলো এই “প্রজাতন্ত্রের কর্মের” পদ গুলো বিভিন্ন আইন দ্বারা সৃষ্ট যা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি পদটা সংবিধানের মাধ্যমে সৃষ্ট যা অন্য কোন আইন দিয়ে সৃষ্ট নয়। তেমনিভাবে সংবিধানে সরাসরি রাষ্ট্রের কিছু পদ তৈরি করে রাখা হয়েছে যা আইন দিয়ে তৈরি নয়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৭ পড়লে রাষ্ট্রপতি পদ, প্রজাতন্ত্রের কর্মের পদ ও লাভজনক পদের মাঝে পার্থক্য পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাবে। এই ১৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, (৩) “এই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হয়, এইরূপ কোন পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোন লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোন কোম্পানী, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না”
অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি পদে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি কোন লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোন কোম্পানী, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না”।
সংবিধানে উল্লিখিত এই নিষেধাজ্ঞাই রাষ্ট্রপতি পদের সাথে প্রজাতন্ত্রের কর্মের পদ বা লাভজনক পদের সাথে পার্থক্য তৈরি করে দেয়। রাষ্ট্রপতি পদের সাথে “লাভজনক” বা “প্রজাতন্ত্রের কর্মের” পদের সাথে আরোও একটা বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য আছে। তাহলো রাষ্ট্রপতি পদের কোন পরিবর্তন হতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হয় অন্যদিকে “লাভজনক” বা “প্রজাতন্ত্রের কর্মের” পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন নেই শুধু নির্দিষ্ট আইন সংশোধন করলেই হয়।
অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ৬৬ তে সংসদ সদস্যের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে সংবিধানে ২০১১ সালে ৬৬(৩) উপ-অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়। এই ৬৬(৩) উপ-অনুচ্ছেদ আরো পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে যে “এই অনুচেছদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোন ব্যক্তি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী হইবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হইবেন না।” অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি পদ এখন আর প্রজাতন্ত্রের কর্মের কোন লাভজনক পদ নয়।
সহজভাবে রাষ্ট্রপতি পদ প্রজাতন্ত্রের কর্মের লাভজনক পদ নয় বরং এটি “রাষ্ট্রের পদ” বা “সাংবিধানিক পদ”।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।