জেলা প্রতিনিধি : অবৈধভাবে পাঁচ কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
রাজশাহীর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও জ্যেষ্ঠ দায়রা জজ আদালতে সোমবার (৬ মার্চ) রাজশাহী জেলা জজ আদালতের একজন আইনজীবী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মামলার বাদী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস। গোদাগাড়ী উপজেলায় তাঁর বাড়ি।
সালাহউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে তিনি মামলা করেছেন। তাঁর পক্ষে আইনজীবী রায়হান কবীর মামলাটি পরিচালনা করেছেন। আদালতের বিচারক আবদুর রহিম মামলাটি দুদককে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস ইউএনও জানে আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। একটি খাসপুকুর ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ আইনে তিনি মামলাটি করেন। আদালত ওই মামলা পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে যা বলা হয়
নতুন মামলায় সালাহউদ্দিন বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, গত দুই বছরে ইউএনও জানে আলম ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। অবৈধ টাকায় তিনি গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন, জায়গাজমি কিনেছেন, গরুর খামার করেছেন।
বিবাদী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি করেছেন উল্লেখ করে অভিযোগে আরও বলা হয়, বাড়ি নির্মাণে বিভিন্ন ইটভাটা থেকে ইট ও বালুমহাল থেকে বিনা মূল্যে জোরপূর্বক বালু নেওয়া হয়েছে। আর সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অতি নিম্নমানের সামগ্রী। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হলেও তিনি সরকারিভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়।
আরজিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করার জন্য ৯ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন ইউএনও। টিআর-কাবিখার উন্নয়নমূলক কাজে ১০ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করেন। এডিপির টাকায় ভাগ-বাঁটোয়ারায় অংশ নিয়ে কমিশন নেন। ইউএনও টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়েছেন। তিনি পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ইউএনও অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে গ্রামের বাড়ি যাতায়াত করেন। তিনি উপজেলা ক্যাম্পাসের আমবাগানের আম দরপত্র ছাড়াই আত্মসাৎ করেন। একইভাবে বিভিন্ন গাছ নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। তিনি হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে উপজেলার পাকড়ি এলাকায় হাজী মানিক উল্লাহ ওয়াকফ স্টেট সম্পত্তিতে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে করেছেন।
একইভাবে ৮৮টি খাসপুকুর ইজারাতেও দুর্নীতি করে অবৈধ অর্থ আয় করেন। গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নানান কারণ দেখিয়ে নানানভাবে চাঁদা গ্রহণ করেন ইউএনও।
এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগে দুর্নীতি করেন। তাঁর ভয়ে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে পারেন না। প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন। এসব কারণে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ গ্রহণ করেনি। তাই আদালতে মামলা করা হয়েছে।
মামলার আরজি থেকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে ইউএনও জানে আলম বলেন, ‘এ সম্পর্কে কী বলার আছে, বলেন? অপরাধ থাকলে আদালতেই প্রমাণ হবে।’