খাস কামরায় নয়, উন্মুক্ত আদালতে (ওপেন কোর্টে) অধস্তন আদালতের বিচারকদের জামিন আদেশ ও রায় দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অনলাইন জুয়ার হোতা সেলিম প্রধানের জামিন বাতিল করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন নির্দেশনা দিয়েছে উচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের দেওয়া ২৩ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আজ সোমবার (১৩ মার্চ) প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলায় অনলাইন ক্যাসিনোর ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধানকে বিশেষ জজ আদালতের দেয়া জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ থেকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেয়া হয়। বদলিকৃত আদালতের বিচারককে রেকর্ড পাওয়ার চার মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার গুলশান ও বনানীর বাসা এবং অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। ওই অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে সেলিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
প্রকাশ্য আদালতে রায়-আদেশের নির্দেশনা ছিল আগেও
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে বিচারিক আদালতের সব আদেশ ও রায় উন্মুক্ত আদালতে দিতে বলেছে হাইকোর্টের প্রশাসন বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী (বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এতে হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারক) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চের একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর ঘোষিত একটি রায় তুলে ধরা হয়।
ওই রায় অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৬৬ এবং ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস (প্রাক্টিস এন্ড প্রসিকিউটর অব সাব-অর্ডিনেট কোর্টস), ২০০৯-এ ১৭৯(২) অনুযায়ী অধস্তন আদালতের জামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী আদেশ এবং রায় প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষ বা তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করতে বলেছে হাইকোর্টের প্রশাসন বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘…স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিচারিক আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের জামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী রায় ও আদেশ প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বা তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হলো।’
বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের রায় মোতাবেক উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সকল বিচারিক আদালতের বিচারককে নির্দেশ প্রদান করা হয়।