আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৩-২৪) দুই দিনব্যাপী নির্বাচন আজ (১৫ মার্চ) ও আগামীকাল (১৬ মার্চ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুদিন ব্যাপী এ নির্বাচনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (মাঝে ১ ঘণ্টা দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি) ভোটগ্রহণ চলবে।
সমিতির এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বুধবার সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিন সকাল ৭ টার পর থেকে দেখা যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে শত শত পুলিশের উপস্থিতি। এছাড়া সাদা পোষাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। দুই দিন ব্যাপি এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরুর সময় সকাল ১০ টা। তবে সকাল ৭ টা থেকেই আইনজীবীরা সমিতি প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছেন।
এদিকে ভোটের এক দিন আগে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অপর সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন—এ নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে।
অবশ্য সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীর ভাষ্য, সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক মনোনীত করার পর বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেন।
মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়েও নেন।
এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
পরবর্তীতে অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হয়। ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ৮ হাজার ৬০২।
সভাপতি এক, সহ-সভাপতি দুটি, সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, সহ-সম্পাদক দুটি এবং সদস্য সাতটি পদসহ মোট ১৪ টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য ওই নির্বাচন হয়ে থাকে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত সাত প্রার্থী হলেন— মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আর কার্যনির্বাহী সদস্য পদে অ্যাডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। আর সহ–সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
সমিতির এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য এর আগে সমিতির বর্তমান সম্পাদক মো. আবদুন নূর (আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল হতে নির্বাচিত) আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহ সম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ (বিএনপি সমর্থিত প্যানেল হতে নির্বাচিত) আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ কমিটি ঘোষণা করেন।
তবে ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৩-২০২৪) নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়ে। সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র দেন।