মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড) এর কার্যক্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের অবস্থাপন্ন লোকজন আগ্রহের সাথে বিনামূল্যে সরকারের দেওয়া লিগ্যাল এইড এর সেবা নিচ্ছে। কিন্তু লিগ্যাল এইড অফিসারের পদ এখনো ‘”সিনিয়র সহকারী জজ” পদমর্যাদার হওয়ায় পদের সীমাবদ্ধতা ও পর্যাপ্ত এখতিয়ার না থাকার কারণে অনেক কার্যক্রম তিনি করতে পারছেননা।
তাই জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যক্রমের সুফল তৃনমূল পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে আরো ব্যাপকভাবে পৌঁছে দিতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এর পদ “সিনিয়র সহকারী জজ” এর পরিবর্তে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার হওয়া উচিত।
গত ২০ মার্চ কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে “Panel Discussion with the Bar & Bench on expansion of Legal Aid” শীর্ষক আলোচনা সভায় Role of Legal Aid Officer in ADR বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এর পদ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার হলে তাঁর বিচারিক এখতিয়ারের কারণে তিনি অনেক বিরোধ প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে ও সহজে নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবেন। তখন বিরোধীয় বিষয় প্রাতিষ্ঠানিক আদালতের বিষয়বস্তু হওয়া সত্বেও তা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ছোট খাট বিষয় নিয়েও আদালতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিরোধের নিষ্পত্তি করতে অনেক বিলম্ব হয়। আর সেটা এডিআর বা আরবিট্রেশন বা মিডিয়েশনের মাধ্যমে হলে দ্রুত শেষ করা সম্ভব। এতে বিচারব্যবস্থা আরো জনবান্ধব হবে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ক্রিমিনাল ও সিভিল জাস্টিস সিস্টেমে আইনের বিভিন্ন ধারায় হওয়া মামলাগুলোর অনেক মামলাই লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। এতে একদিকে, বিচারপ্রার্থীরা দ্রুততম সময়ে ও সহজে সেবা পাবে। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক আদালতে মামলার আধিক্য ও চাপ হ্রাস পাবে।
তিনি লিগ্যাল এইড অফিস গুলোতে জনবল সংকট, পরিবহন ও অবকাঠামোগত সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে সরকারের উর্ধতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন, সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাঈমা হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’র পরিচালক ও জেলা জজ মোহাম্মদ আল মামুন।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় বিষয় ভিত্তিক আরো বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার (অতিরিক্ত জেলা জজ) ফারাহ মামুন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক এবং USAID’s Promoting Peace and Justice Activity এর Chief Of Party হেদার গোল্ড স্মিত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) মোঃ নুরে আলম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ আবদুর রহিম, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা ২, ৩, ৪ এবং ৫ যথাক্রমে মোঃ সাইফুল ইলাহী, মোহাম্মদ আবদুল কাদের, মোঃ মোশাররফ হোসাইন ও নিশাত সুলতানা, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’র উপ পরিচালক (অর্থ ও হিসাব, যুগ্ম জেলা জজ) মোঃ হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ এবং ২ যথাক্রমে মাহমুদুল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজীন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ মোঃ আসিফ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সহকারী জজ মঃ ওমর ফারুক, সহকারী জজ আবদুল মান্নান, সহকারী জজ মাজেদ হোসাইন সহ আরো বিচারক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, সিনিয়র আইনজীবীগণ, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।