বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেটশীপ প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামে কুমিল্লায় কয়েকজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আইনজীবী পরিচয় দেওয়া এক প্রতারক। এ অভিযোগের ভিত্তিতে কথিত ওই আইনজীবী ও তার শ্যালককে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-১১)।
র্যাব-১১ এর কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সোমবার (২৭ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
আটকরা হলেন- কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরপাড় এলাকার মো. শামসুল হকের ছেলে আইনজীবী পরিচয় দেওয়া মো. এহতেশামুল হক নোমান (৩৪) এবং তার শ্যালক বুড়িচং উপজেলার বাহেরচর এলাকার জাহিদ হাসান ভূঁইয়া (২১)।
সাকিব হোসেন জানান, এহতেশামুল হক এইচএসসির পর ২০১১ সালে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে ভর্তি হয়। দুই বছর পড়ার পর আর্থিক অভাবে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েন। পরে ২০১৪ সালে ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে আইন বিষয়ে অনার্সের একটি সার্টিফিকেট কেনেন তিনি।
সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে তার বন্ধু কাউসারের মাধ্যমে এক আইনজীবীর অধীনে কুমিল্লা আদালতে কাজ শুরু করেন। এ সময়ে একাধিকবার বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করতে পারেননি। এরইমধ্যে তিনি একটি ভুয়া আইনজীবী কার্ড ও মানবাধিকার কার্ডও তৈরি করেন।
কাজের সুবাদে আদালতে এহতেশামুলের সঙ্গে রেজাউল নামে এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীর পরিচয় হয়। সে রেজাউলের কাছে নিজেকে বড় আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেয় এবং টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ছাড়াই বার কাউন্সিল পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন।
একপর্যায়ে রেজাউল ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে তাঁকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। তাঁদের মধ্যে দুজন নিজেদের যোগ্যতায় বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই খবর জানাজানি হলে আরও ১৭ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী তাঁকে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। তাঁদের মধ্যে একজন উত্তীর্ণ হন। পরে এভাবে আরও ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। কিন্তু টাকা দেওয়া শিক্ষনবিশ আইনজীবীদের কেউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী অন্যান্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা রেজাউল ও এহতেশামুলকে তাদের টাকা ফিরত দিতে বলে। তখন ভুয়া আইনজীবী এহতেশামুল তার শ্যালক জাহিদকে বার কাউন্সিলের আইনজীবী সাজিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এ কথা বলিয়ে দেয়।
কথিত শ্যালক জানায়, রেজাউল পুরো টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করায় এমন হয়েছে। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের নিষেধ করে যাতে এহতেশামুলকে টাকার জন্য চাপ না দেয়। যদি তা করে তাহলে আইনি পেশা থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
মেজর সাকিব বলেন, মার্চ মাসের প্রথমে র্যাব অফিসে একটা অভিযোগ আসে। তাতে উল্লেখ করা হয় কয়েকজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার নাম করে ভুয়া আইনজীবী পরিচয় দেওয়া নোমান ও তার শ্যালক জাহিদ কয়েক ধাপে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা তাকে খুঁজে না পেয়ে র্যাব অফিসে অভিযোগ দেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব রোববার (২৬ মার্চ) রাতে তাদেরকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিতে ভুয়া অ্যাডভোকেট নোমান ও তার শ্যালক প্রতারণার সব ধাপ পার করে।
এ সময় তাদের দুজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষার উত্তরপত্র, আইন সম্পর্কিত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া সার্টিফিকেট, হলফনামা, একটি এটিএম কার্ড,একটি সিটি ব্যাংকের চেকবই, স্ট্যাম্প, কথোপকথনের স্ক্রিনশট, দুইটি পেনড্রাইভ, দুইটি আইনজীবী সম্বলিত মনোগ্রাম, একটি কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি, ৫টি মোবাইল ও নগদ ১৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। আটক দুইজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।