দুর্নীতির দায়ে সেটেলমেন্ট অফিসার ও সার্ভেয়ারের কারাদণ্ড
মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা।

দুর্নীতির দায়ে সেটেলমেন্ট অফিসার ও সার্ভেয়ারের কারাদণ্ড

ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে একজনের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অপরাধে সাবেক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ঢাকার সাবেক সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আশরাফ আলী হাওলাদার ও ঢাকা সেটেলমেন্ট অফিসের সাবেক সার্ভেয়ার মো. মনিরুল ইসলাম।

রায় ঘোষণার সময় আসামি মনিরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাকে সাজা পরোয়ানাসহ জেল হাজতে পাঠানো হয়। অপর আসামি আশরাফ আলী হাওলাদার পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি জানিয়েছেন।

রায়ে আসামি আশরাফ আলী হাওলাদারকে পাঁচ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি মনিরুল ইসলামকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী

ঢাকার উত্তরখানস্থ একটি সম্পত্তির ক্রয় সূত্রে মালিক স্বর্ণা খান। তিনি থাকেন ঢাকায় কাঠাল বাগান এলাকায়। এতো দূর থেকে উত্তর খনে গিয়ে সবসময়ে বর্ণিত সম্পতির খোঁজ-খবর রাখা সম্ভব ছিল না। ফলে স্থানীয় নূরন্নবী ফিরোজ উক্ত সম্পত্তি ১৯৯১-১৯৯২ সালের একটি এওয়াজবদল দলিল মূলে দখল করে তার উপর ঘর তুলে দখলি স্বত্ত্ব স্থাপন করেন।

বেদখলের বিরুদ্ধে স্বর্ণা খান আপিল করলে তার নামে রেকর্ড হয়। রেকর্ডের বিরুদ্ধে নূরন্নবী ফিরোজ আপিল করলে আপিল অফিসার আশরাফ আলী হাওলাদার উক্ত সম্পত্তি ২০০২ সালে নূরন্নবী ফিরোজের পক্ষে রেকর্ডের রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে স্বর্ণা খান আপিল করলে আব্দুল হাকিম উভয় পক্ষের কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই আশরাফ আলী হাওলাদারের রায়ের উপর ভিত্তি করে ২০০৭ সালে রেকর্ড প্রদানের আদেশ দেন।

পরবর্তীতে আবদুল হাকিমের রায়ের বিরুদ্ধে স্বর্গ যান পুনরায় আপিল আবেদন করলে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার স্বপন কুমার বৈদ্য উভয় পক্ষের কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা পূর্বক স্বর্ণা খানের পক্ষে রেকর্ড সংশোধনের সুপারিশ করেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে মহাপরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ইবিটি রুলসের ৪৪ বিধি মোতাবেক স্বর্ণা খানের নামে চূড়ান্তভাবে রেকর্ড সংশোধন করেন।

যাতে প্রমাণিত হয়, স্বর্ণা খান ক্রয় সূত্রে সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আশরাফ আলী হাওলাদার ও মো. আবদুল হাকিম পরস্পর যোগসাজশে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক স্বর্ণা খানের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলকারী নূরন্নবী ফিরোজের নামে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেন।

এ অভিযোগে ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক নূর হোসেন খান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় এ মামলা করেন। মামলায় আশরাফ আলী হাওলাদার, মো. আবদুল হাকিম এবং নূরন্নবী ফিরোজ আসামি ছিলেন।

মামলায় ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে আশরাফ আলী হাওলাদার, আবদুল হাকিম এবং নূরন্নবী ফিরোজের সঙ্গে সার্ভেয়ার মো. মনিরুল ইসলামকে সংযুক্ত করা হয়। তবে আবদুল হাকিম মারা যাওয়ায় তাকে বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীতে আসামি নূরন্নবী ফিরোজ চার্জগঠনের শুনানিতে অব্যাহতি পায়।