পাকিস্তানে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন লাহোরের হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) আদালতের একটি একক বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন। আদালতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানে বাক্স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও সাংবাদিকেরা।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ব্যবহার করছে—এমন অভিযোগ তুলে আইনটির বিরুদ্ধে লাহোরের হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি শাহিদ করিম এ রায় দেন। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট যদি হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করেন, তাহলে রায়টি সারা দেশে কার্যকর হবে।
কেউ যদি মৌখিক, লিখিত, আকার–ইঙ্গিত, দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড বা অন্য কোনোভাবে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় বা অবমাননা করে বা করার চেষ্টা করে অথবা অসন্তোষ ছড়াতে উসকানি দেয় বা উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে, তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ জরিমানা করা হতে পারে অথবা জরিমানাসহ বা জরিমানা ছাড়া কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে, যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের শিকার হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানও। আগাম নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তানজুড়ে সভা–সমাবেশ করে আসছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ শতাধিক মামলা করা হয়েছে।
লাহোরের আদালতে আইনটির বিরুদ্ধে একজন আবেদনকারীর আইনজীবী আবুজর সালমান নিয়াজি। তিনি বলেন, আইনটি ১৫০ বছরের বেশি পুরোনে। এটি সেকেলে ও অসাংবিধানিক। আইনটি বাতিল করার দরকার ছিল।
আইনজীবী আবুজর সালমান নিয়াজি বলেন, দেশে এমন একটি আইন থাকতে পারে না যেটি ভিন্নমত প্রকাশ ও বাক্স্বাধীনতার সুযোগ দেয় না। আইনটি পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ–১৯ লঙ্ঘন করে। এই অনুচ্ছেদে বাক্স্বাধীনতার পক্ষে বলা হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে পাকিস্তানে বিভিন্ন সরকারের আমলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের হয়রানি করতে ব্যবহার করা হয়েছে। বলা যেতে পারে, সাংবাদিক আরশাদ শরিফের কথা। পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য যাঁদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। গত অক্টোবরে কেনিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
লাহোরের হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর কোনো ভয় ছাড়া সাংবিধানিক অধিকার চর্চা করা যাবে বলে মনে করছেন পাকিস্তানে বাক্স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা উসামা খিলজি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ভিন্নমত দমন করতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটির অপব্যবহার করা হচ্ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৮৬০ সালে ভারতবর্ষে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি জারি করেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার। আইনটিতে বলা হয়েছে, ‘কেউ যদি মৌখিক, লিখিত, আকার–ইঙ্গিত, দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড বা অন্য কোনোভাবে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় বা অবমাননা করে বা করার চেষ্টা করে অথবা অসন্তোষ ছড়াতে উসকানি দেয় বা উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে, তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ জরিমানা করা হতে পারে অথবা জরিমানাসহ বা জরিমানা ছাড়া কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে, যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।’