মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র্যালী ও সমাবেশে ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিতর্কিত পেনশন সংস্কারের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
রাজধানী প্যারিস এবং পার্শ্ববর্তী নান্তে সহ ফ্রান্সের অধিকাংশ প্রধান শহর জুড়ে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ায় সমাবেশগুলি বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিক্ষোভকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপ করে।
ফ্রান্স সংবিধানের বিতর্কিত ৪৯.৩ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের মাধ্যমে কোন প্রকার বিতর্ক ছাড়া ফ্রান্স পার্লামেন্টকে বাইপাস করে গত মাসে পেনশন সংস্কার পরিকল্পনা পাশ হওয়ার জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। মে দিবসের চেতনা তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে এবং যা শেষ পর্যন্ত মে দিবসের সমাবেশে সারা দেশে বিক্ষোভে উত্থিত হয়।
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রস্তাবিত পেনশন সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে ৬৪ বছর বৃদ্ধির মাধ্যমে ফ্রান্সের একটি স্থবির অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তবে পেনশন ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছাড়াই সম্ভাব্য একটি সুষম বাজেটের মাধ্যমে লক্ষবস্তু অর্জন করতে পারত বলে সরকার বিরোধীপক্ষ দাবী করে আসছে।
ফ্রান্সে এ বছরের মে দিবসের বিক্ষোভ শ্রম অধিকারের জন্য সাধারণ দাবির বাইরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন অনিয়ম-অসাম্যতা দূরীকরণের দাবী আদায়ে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করেছে।
মে দিবসের জমায়েত, সমাবেশ, র্যালী ও বিক্ষোভ শুরুর সাথে সাথে প্যারিস এবং নান্তে শহরে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারীরা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
ফরাসী কর্তৃপক্ষ এবছর মে দিবসে যেন অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে জন্য সমাবেশস্থল ও আশে পাশের এলাকার বিক্ষোভ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন এবং প্রতিবাদ করার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলি উদ্বেগ জানিয়েছিল এবং তা ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সে মে দিবসের সমাবেশ রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁর পেনশন সংস্কারকে ঘিরে জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ এবং হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
সংসদীয় ভোটকে বাইপাস করার সরকারের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিতর্কিত আইনটি পাস হওয়ার ফলে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত হয়।
সমাবেশে অংশগ্রহণ নেয়া বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারির অনুমোদন সহ, প্রতিবাদ করার অধিকার এবং গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিতর্ককে মে দিবসের চেতনা আরও তীব্র করে তুলেছে।