যশোরে রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আরতি রাণী ঘোষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৯ মে) সকালে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা স্বাক্ষরিত নোটিশ আরতি রানীর বাড়িতে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে আবু মোর্তজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইনজীবীদের গাউন পরা অবস্থায় একজন রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধর করা আইনজীবীদের জন্য মর্যাদাহানিকর। এ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আরতি রাণী ঘোষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নোটিশে আগামী তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
তুচ্ছ ঘটনায় গত রোববার (৭ মে) যশোর আদালতের সামনে শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে (মুজিব সড়ক) এক রিকশাচালককে মারধর করেন আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
আরতি রাণী ঘোষ শহরের আম্বিকা বসু লেনের মৃত নীলরতন ঘোষের স্ত্রী। রিকশাচালকের চেয়ে নারী আইনজীবী বয়সে ছোট হয়েও এভাবে মারধর করাতে অবাক হয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা জানিয়েছেন, ‘ওই নারী আইনজীবী রিকশাচালককে এলোপাতাড়ি চড় মারার সঙ্গে জুতাপেটাও করেছেন।’
এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। তবে অভিযুক্ত আইনজীবী আরতি রানী দাবি করেন, রিকশাচালকের আঘাতে পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হবার পর উত্তেজিত হয়ে রিকশাচালককে সামান্য প্রহার করেন।
ভাইরাল ভিডিওতে যা দেখা গেছে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘কালো গ্রাউন পরা ৫০ বছর বয়সী নারী আইনজীবী রিকশাচালককে জামার কলার ধরে রিকশা থেকে নামিয়ে একের পর এক চড়-থাপ্পড় মারছেন। মারতে মারতে তাকে রিকশার চাবি নিয়ে পৌরসভায় যেতে বলেন। জামার কলার ধরে বারবার রিকশাচালককে পৌরসভায় নিয়ে লাইসেন্স বাতিল করার হুমকিও দিতে দেখা যায়।
এ সময় রিকশাচালক হাত উঁচু করে মাফ চান। বারবার রিকশাচালক আকুতি-মিনতি করলেও ওই নারী আইনজীবীর মন গলতে দেখা যায়নি বরং ওই নারী আরও চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি চড় মারতে থাকে। এ সময় সড়কে পথচারীরা ওই আইনজীবীকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
ভিডিওতেই অপর এক পথচারীর মুখে শোনা যায় ওই নারী আইনজীবী রিকশাচালককে জুতাপেটাও করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেও ওই আইনজীবী রিকশাচালককে চড়-থাপ্পড় মেরেই যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে এক নারী এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে ক্ষান্ত হন তিনি। এ সময় ওই রিকশাচালক তার রিকশা নিয়ে চলে যান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, রিকশাচালককে এভাবে মারতে দেখে তিনি এগিয়ে যান তাকে রক্ষা করতে। আইনজীবীকে বারবার অনুরোধ করার পরেও তিনি কারও কথা শুনেনি। একের পর এক রিকশাচালককে তিনি মেরেই যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সড়কে অবস্থান করা বিভিন্ন পথচারী প্রতিবাদ করলে তিনি কিছুটা শান্ত হন।
তবে আইনজীবী আরতি রানী ঘোষ দাবি করেন, তিনি কোর্ট শেষে ফেরার পথে সড়ক অতিক্রম করতে গেলে ওই রিকশাচালক তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। এ কারণে তিনি তাকে মারধর করেন। উত্তেজিত হয়ে এই কাজটি করে ফেলেছেন।
এমন আচরণ করা ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আরতি রানী বলেন, ‘ওকে কি পুঁজো করবো?’ ওই আইনজীবীর দাবি, রিকশাচালককে মেরে তিনি সঠিক কাজ করেছেন।
এদিকে আইনজীবী হয়ে সড়কের ওপরে এক রিকশাচালককে এভাবে মারধর করায় রীতিমতো অবাক হয়েছেন খোদ আইনজীবীরা। এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ইসহক। এ ঘটনায় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।