সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি সমর্থিত ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মারামারি, সাধারণ ও গুরুতর আঘাত, শ্লীলতাহানি, চুরি, ক্ষয়ক্ষতি করার কারণে দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজধানীর শাহবাগ থানায় আইনজীবী সমিতির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিকউল্লাহ মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে এ মামলা দায়ের করেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ১০০/১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবিতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিক্ষোভের সময় সমিতির সম্পাদকের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবী জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমিতি ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। অন্যদিকে সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বেলা দেড়টার দিকে মিছিল নিয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে সম্পাদকের কক্ষে দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূর তাঁর কক্ষে ছিলেন।
এ ঘটনায় সমিতির সম্পাদক ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল নূর এ হামলার জন্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে দায়ী করেছেন। এর জন্য তারা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা বলছেন, উদোর পিণ্ড বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।
ঘটনার পর সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূর বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কর্মসূচি ছিল সমিতি ভবনের নিচে। তাদের ইস্যু সমিতির নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত করতে এখানে ইস্যু বানাতে চায়। আমরা দ্বিতীয় তলায় ছিলাম, নিচে যাইনি। তারা চড়াও হয়ে এখানে এসে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করেছে। সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। তারা এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে আসে না, আসে সহিংসতার জন্য। তারা অফিস ভাঙচুর করেছে, কয়েকজন আইনজীবীকে আহত করেছে। এর বিরুদ্ধে আইনগত পদেক্ষপ নেব।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তারা (আওয়ামীপন্থী) ভাঙচুর করে আমাদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা–কর্মী তথা সাধারণ আইনজীবীদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে আওয়ামীপন্থীদের হামলায় বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন।’
এদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আজ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আবারও বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন (২০২৩-২৪) হয়। এই নির্বাচন পরিচালনায় উপকমিটি নিয়ে ভোটের প্রথম দিন ১৫ মার্চ তর্কে জড়ায় দুই পক্ষ। পরে পুলিশ আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে সমিতির মিলনায়তন (ভোটকেন্দ্র) থেকে বের করে দেয়। বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দৃশ্যত ভোট থেকে বিরত থাকেন। ভোটের ফলাফলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, এরপর সমিতির ভোট নিয়ে প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে মাঝেমধ্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে থাকেন।