উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত আইনের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৫ মে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়ের ২৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের পৃথক তিনটি রিটের শুনানি নিয়ে জারি করা রুল আংশিক মঞ্জুর করে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
উপজেলা পরিষদ আইনের এ ধারাটি বাতিল করার ফলে উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবেন না ইউএনওরা। অর্থাৎ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হবে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের কোনো কার্যক্রমও উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে হবে না বলে জানান আইনজীবীরা।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ হলো উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর ২৪ ধারার অধীনে গঠিত/প্রতিষ্ঠিত, সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদসহ ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত একটি স্থানীয় সরকার।
সংসদ উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৮ এর ৩৩ ধারা জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ না করে প্রশাসনকে (ইউএনওদের) দিয়েছে। এটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক। অতএব, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা (যা ২০১১ সালের আইন নং ২১ অনুযায়ী (সংশোধিত) সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাতিলযোগ্য।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ৫ জুন পর্যন্ত এ রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
মামলার প্রেক্ষাপট
উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃংখলা প্রতিপালন এবং বিধি মাধ্যমে নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলী পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।
২০২১ সালের ১৫ জুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ক্ষমতা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজসহ তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান এ রিট দায়ের করেন।
একই বছরের ১৬ অক্টোবর উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ধারা ১৩ (ক) ১৩ (খ) ও ১৩ (গ) কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
পাশাপাশি, উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে আরও একটি রুল জারি করা হয়।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ পৃথক রুল জারি করেন।