চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি

আইনজীবীকে হাজতে আটক রাখার অভিযোগ, বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে বারে নালিশ

চট্টগ্রামে এজলাস চলাকালীন মোবাইলে কথা বলার কারণে বিচারকের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীকে আদালতের হাজতখানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আইনজীবী বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর গতকাল শনিবার (৮ জুলাই) লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আইনজীবী এ. কে. এম. শাহরিয়ার রেজা। তিনি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য।

লিখিত অভিযোগে চট্টগ্রামের ৭ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শামসুল আরেফিন কর্তৃক বেআইনিভাবে অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার রেজাকে লাঞ্ছিত ও অপদস্তপূর্বক আদালতের হাজতখানায় আটক রাখা ও আইনজীবী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ৬ জুলাই আনুমানিক বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রামের ৭ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসে একটি প্রয়োজনীয় কাজে প্রবেশ করেন অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার। এ সময় তিনি সিভিল ড্রেস পরিহিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর মোবাইলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কল আসে। আদালতের একপাশে গিয়ে তিনি কলটি রিসিভ করেন।

কল রিসিভ করার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক শামসুল আরেফিন ওই আইনজীবীকে তাঁর কাছে ডাকেন। এসময় শাহরিয়ার নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দেন এবং তাঁর ভুল হয়েছে মর্মে বিচারককে অবহিত করেন। উপস্থিত আইনজীবীবৃন্দ এবং সরকারী আইনকর্মকর্তাগণও তাঁকে আইনজীবী শনাক্ত করে বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

কিন্তু বিচারক শামসুল আরেফিন রগান্বিত হয়ে সমস্ত আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হয়েছেন তো কি হয়েছে?’ এরপর পুলিশ ডেকে অ্যাডভোকেট শাহরিয়ারকে কোর্ট লকআপে (আদালতের হাজতখানা) ঢুকানোর নির্দেশ দেন।

এসময় উপস্থিত সকল আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহরিয়ারকে এজলাস ত্যাগ করতে বললে তিনি আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে লকআপে ঢুকার জন্য নির্দেশ দেয়।

তখনো ওই আইনজীবী আদালতের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমার ভুল হয়েছে, আমি আদালতের সম্মুখে আর কখনো ফোন রিসিভ করব না। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

তখন বিচারক বলেন, ‘আমার কথার উপর কথা বললে এখনি জেলহাজতে প্রেরণ করব।’ এরপর বিচারক শামসুল আরেফিন পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিলে পুলিশ তখন আদালতের নির্দেশে অ্যাডভোকেট শাহরিয়ারকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে কোর্ট লকআপে প্রেরণ করেন।

এমতাবস্থায় অ্যাডভোকেট শাহরিয়ারসহ এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে কর্নপাত না করে আনুমানিক ১২/১৫ মিনিট তাঁকে লকআপে আটক রাখেন এবং আইনজীবী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকেন।

পরবর্তীতে বিচারক ওই আইনজীবীকে লকআপ থেকে বের করার বিষয়ে কিছু না বলেই এজলাস ত্যাগ করেন। উপস্থিত আইনজীবীরা পরে অ্যাডভোকেট শাহরিয়ারকে লকআপ থেকে বের করেন। বিচারকের এমন আচরণ পুরো আইনজীবী সমাজের জন্য অপমানজনক বলে অভিযোগে বলা হয়।

এঘটনার পরপরই অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার বিষয়টি জেলা পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল, মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ এবং পরবর্তীতে জেলা আইনজীবী সমিতির তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক অ্যাডভোকেট অলি আহমদকে অবগত করেন।

একইদিন সন্ধ্যায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিকেও বিষয়টি জানানো হলে তিনি লিখিত অভিযোগ প্রদানের পরামর্শ দেন। সেই অনুসারে অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার এ ঘটনায় চট্টগ্রামের ৭ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শামসুল আরেফিন বিরুদ্ধে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।