প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও নেতিবাচক আচরণ তাদের বেঁচে থাকা ও বিকশিত হওয়ার অধিকারের প্রতি আঘাত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, প্রতিবন্ধিতা কেউ চেয়ে নেয় না। প্রতিবন্ধিতা কোন অভিশাপও নয়। প্রতিবন্ধীরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এবং মূল জনগোষ্ঠীর মতোই ব্যক্তি ও নাগরিক হিসাবে সমঅধিকার ও সমব্যবহার পেতে হকদার।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় রাজশাহীতে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে আদালত এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান গত বুধবার (৫ জুলাই) এ রায় দেন।
প্রতিবন্ধিতা কেউ চেয়ে নেয় না। প্রতিবন্ধিতা কোন অভিশাপও নয়। প্রতিবন্ধীরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এবং মূল জনগোষ্ঠীর মতোই ব্যক্তি ও নাগরিক হিসাবে সমঅধিকার ও সমব্যবহার পেতে হকদার।
রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮ এর ২৫(২) ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৯(২) ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত ওই সাংবাদিকের নাম আবদুল লতিফ লিটু (৪৭)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব পারপুগী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
আসামি জরিমানার টাকা পরিশোধ করলে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
রায়ে আদালত বলেন, প্রতিবন্ধিতা কেউ চেয়ে নেয় না। প্রতিবন্ধিতা কোন অভিশাপও নয়। প্রতিবন্ধীরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এবং মূল জনগোষ্ঠীর মতোই ব্যক্তি ও নাগরিক হিসাবে সমঅধিকার ও সমব্যবহার পেতে হকদার।
তাদের প্রতি সংবিধান ও আইন মতে, কোনরূপ বৈষম্য মূলক আচরণ কাম্য নয়। বৈষম্যমূলক ও নেতিবাচক আচরণ তাদের বেঁচে থাকা ও বিকশিত হওয়ার অধিকারের প্রতি আঘাত।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার অস্বীকার না করে মানব স্বত্বা ও নাগরিক হিসাবে সকল অধিকার সুনিশ্চিত করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এর মূল ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করা রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবদুল লতিফ লিটু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটূক্তি করে নিজের ফেসবুকে একটি আপত্তিকর পোস্ট দেন। বিষয়টি নজরে এলে রাজশাহী জেলা বাঁধন প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি জাহিদুর রহমান ওই বছরের ২৬ অক্টোবর রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন।
পরে মামলার তদন্ত, ফরেনসিক পরীক্ষা ও আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে লিটু দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত রায় ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ইসমত আরা। তিনি জানান, রায় ঘোষণার পর আসামি লিটুকে কারাগারের হাজতে রাখা হয়েছে। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলে তিনি ছাড়া পাবেন। অন্যথায় আদালতের রায় অনুযায়ী তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।