পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ
আইনি নোটিশ

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস, পদক্ষেপ জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে দেশের নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে এ নোটিশ প্রেরণ করেন।

নোটিশে বলা হয়, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরন, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২০ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষা গাইডলাইন,২০২১ প্রণয়ন করে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে, তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯ টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে সরকার। যেখানে উক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। আইনে দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ ও ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে জানতে পেরেছি, মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ৫ কোটিরও বেশি নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যাক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। যার ফলে নাগরিকদের মাঝে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং ভয়ভীতি সঞ্চার হয়েছে। সরকারের তরফে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করার পর এই শঙ্কা আরও বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের নাগরিকের ব্যাক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে, যেখানে তাদের নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

নোটিশে বলা হয়, দেশের নাগরিকদের তথ্য ফাঁস সাইবার সিকিউরিটির পর্যায়ে পড়ে। এই ঘটনায় নাগরিকদের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। কারণ একজন ব্যক্তির কোন একাউন্ট খুলতে যে তথ্য গুলো প্রয়োজন সেগুলো সব ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। আইডেন্টিডি থেফট’ বা পরিচয় চুরি হওয়া নাগরিকদের ব্যাক্তিগত তথ্য দিয়ে অন্য কেউ বিভিন্ন অপরাধ করতে পারে, জনশৃংখলা পরিপন্থি কোনো কাজে ব্যবহৃত হইতে পারে অথবা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে অপব্যবহার হতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে উক্ত আইনের ৫ ধারার বিধান অনুসারে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করেছে। তাছাড়া আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-কে চেয়ারম্যান কওে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠিত হয়েছে এবং উক্ত আইনের ৯(১) ধারা মোতাবেক, সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি অধীনে জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম দায়িত্ব পালন করতে বলা আছে।

তদনুযায়ী এই জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল ও জাতীয় ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম; ক) জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষা গাইডলাইন, ২০২১ আওতায় কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? খ) সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যাক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে, সাইবার বা ডিজিটাল হামলা এবং সাইবার বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে উহা প্রতিকারে কী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? গ) সম্ভাব্য ও আসন্ন সাইবার বা ডিজিটাল হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে কী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে? ঘ) কারা, কীভাবে এবং কোন সংস্থার মাধ্যমে এই তথ্য ফাঁস হয়েছে এটি খুঁজে বের করতেছে কিনা এবং জড়িত সংস্থাগুলোকে এর সকল দায়িত্ব নিবে কিনা? ঙ) তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে কিনা? চ) ফাঁস হওয়া ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি সিস্টেম কী ছিল এবং ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য তারা কী করেছিল প্রতিটি বিষয় তদন্ত করছে কিনা? ছ) তথ্য সুরক্ষার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের অবহেলার কারণে এটা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবে কিনা?

এমতাবস্থায় নোটিশে উল্লেখিত এবং (ক) থেকে (ছ) পর্যন্ত এতদবিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা আগামী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ব্যর্থতায় সমস্ত দ্বায়ভার নোটিশের বিবাদীদেরকে নিতে হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।