নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতার সমাধান সূত্র
ড. এম জসিম আলী চৌধুরী

অতিরিক্ত বিচারপতিদের স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে মহামান্য আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক রায়: একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন

ভূমিকা

২০১৪ সালে বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন এবং বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী-কে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ না দেয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণ রায় কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। মামলাটির আদেশ হয়েছিলো ২০২৩ এর জুনে। পূর্ণ রায় এসেছে গত ২৮ ফেব্রয়ারি ২০২৪ (https://www.supremecourt.gov.bd/resources/documents/1099382_CA_NO-232_of_2014_Altaf_Hossain_Farid_Ahmed_Shibli.pdf)

রায়ের চূড়ান্ত আদেশের (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে বিচারক নিয়োগ নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মতের পার্থক্য হলে কোন এক পক্ষের মতামত প্রাধান্য পাবে না। মহামান্য আপিল বিভাগের আদেশে আরো বলা হয়েছে, এ ধরণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কাছে ব্যাপারটা দ্বিতীয়বার পাঠানো হবে। দ্বিতীয়বারে প্রধান বিচারপতি যা বলবেন সেটি যথাযথ বিবেচনা করা হবে বলে আদালত আশা করেন (চূড়ান্ত আদেশের (ই) অনুচ্ছেদ)। এ প্রস্তাবনাটি কৌতহল উদ্দীপক। কারণ এটি উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সম্পর্কে আমাদের (ভারত এবং পাকিস্তানেরও) সর্বোচ্চ আদালতের গত বিশ-ত্রিশ বছরের রায়ের ধারার বিপরীত।

এই বিশ-ত্রিশ বছরে ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে আমরা বিচারক নিয়োগ প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির মতের প্রাধান্যের বাইরে কিছুই মেনে নিতে দেখিনি। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ আদালতগুলো এটাকেই সংবিধান, সংবিধানের ব্যাসিক স্ট্রাকচার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একমাত্র গ্যারান্টি বলে এসেছেন এবং বলে চলেছেন। এটি নিয়ে উপমহাদেশের আইনের অধ্যাপকদের অনেকেই চাঁছাছোলা সমালোচনা করে থাকেন।

এই মামলার বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে বাদ দেয়া দুই বিচারপতি নিয়োগের যোগ্যতার পূর্বশর্ত (যেমন, ১০ বছর হাইকোর্ট প্রাকটিস) পূরণ করেন নি বলে যুক্তি এসেছিল। আপিল বিভাগও সংশ্লিষ্ট বিচারকদের এন্টিসিডেন্ট বা যোগ্যতার শর্ত পুরনের প্রশ্নে মতবিরোধ নিয়ে বলেছেন। জুডিশিয়াল একুমেন (বিজ্ঞতা) নিয়ে মতবিরোধের কথা বলেন নি। সুতরাং একটা ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ থাকে যে, জুডিশিয়াল একুমেন প্রশ্নে বাংলাদেশের আপিল বিভাগে হয়ত এখনো আগের মতোই প্রধান বিচারপতির মতামতের প্রাধান্যের অবস্থানে আছেন।

দুটি বিনীত সমালোচনা

একাডেমিক বিবেচনায় আমি (এবং আমার মতো আরো অনেকেই) বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতি ও উনার কলিজিয়ামের একচ্ছত্র আধিপত্য ও শেষ কথা বলার অধিকারের পক্ষে নই। সেদিক থেকে এ রায়টা অনেকেরই সমর্থন পাওয়ার কথা। কিন্তু একটা ভালো রায় লেখার মতো বিশদ গবেষণাধর্মী ও শ্রমসাধ্য কাজের পেছনে মাননীয় বিচারপতিদের যে ধরণের গভীর ও মানসম্মত গবেষণা সহায়তা পাওয়ার কথা সে ধরণের সহায়তা তাঁরা এ মামলার ক্ষেত্রে পান নি বলেই আমার মনে হয়েছে। মহামান্য আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের রায়ের কয়েকটি জায়গা থেকে দুটি উদাহরণ দিচ্ছি।

১.

মতামতের প্রাধান্যের প্রশ্নে মাননীয় বিচারপতি (বর্তমানে বাংলাদেশের মহামান্য প্রধান বিচারপতি) ওবায়দুল হাসানের সিদ্ধান্তটি অনেকটাই ভারতীয় এস পি গুপ্তা মামলার রায়ের উপর ভিত্তি করে নেয়া (পূর্ণ রায়ের ৫২-৫৭ পৃষ্ঠা দেখুন) বলে প্রতীয়মান হয়। ১৯৮২ সালের এ রায়ে ভারতীয় বিচারপতি ভগবতির মূল কথা ছিলো, বিচারক নিয়োগের সুপারিশ প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির মত গুরুত্বপূর্ণ তবে শেষ কথা নয়। রায়টি তৎকালীন ভারত সরকারের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে মাত্র ৪-৩ মেজরিটিতে দেয়া হয়েছিল। পরে ১৯৯৩ সালে সেকেন্ড জাজেস কেইস (Supreme Court Advocates-on-Record Association v Union of India (1993) 4 SCC 441) এর বিচারপতিরা এস পি গুপ্তার রায়টি বাতিল করে দেন।

তখন বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সুপারিশ মানা বাধ্যতামূলক। পরে থার্ড জাজেস কেইস (Re Special Reference No 1 of 1998 (1998) 7 SCC 739) এ আবারো বলা হয় প্রধান বিচারপতি ও উনার কলিজিয়ামের সুপারিশ মানা বাধ্যতামূলক। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ভারতীয় বিচারক নিয়োগ কমিশন মামলায় (Supreme Court Advocates-on-Record Association v. Union of India (2016) 5 SCC 1) এ কথাটা আবারো একেবারে বেদ বাক্যের মত করে বলা হয়।

একই কাজ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট করেছেন ১৯৯৬ সালের আল জিহাদ ট্রাস্ট, ২০১০ সালের নাদিম আহমেদ (১৮ তম সংশোধনী) ও ২০১১ সালের মুনির হোসেন ভাট্টি (১৯ তম সংশোধনী) মামলায়। আমাদের মাহামান্য আপিল বিভাগও এ কাজ করেছেন মাসদার হোসেন ও ১৬তম সংশোধনী (Advocate Asaduzzaman Siddiqui v. Bangladesh10 ALR (AD) 03) মামলা সহ আরো অনেক মামলায়।

এখন এতগুলো ধারাবাহিক রায়ের বিপরীতে কথা বলতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ওই রায়গুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে ওগুলোকে খণ্ডন করেই বলতে হবে। আমাদের বলতে হবে ওই মামলাগুলোর প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা কেন এখানে নেই। আমাদের আরো বলতে হবে কেন আমরা এস পি গুপ্তার কাছেই ফিরে যাবো। ওই মামলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (যেটি আগে বলেছি) এবং ঘটনা (বিচারকের বদলি)-র বিবেচনায় কারো কারো কাছে এস পি গুপ্তা মামলাটি এ মামলার জন্য কিছুটা দূরবর্তী মনে হতে পারে। কিন্তু মহামান্য আদালতের গবেষণা সহায়তায় যারা ছিলেন তাঁরা এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছেন বলেই মনে হয়েছে। এমতাবস্থায় এস পি গুপ্তা-র বাতিল হয়ে যাওয়া রায়টি থেকে দেয়া পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার রেফারেন্স আমাদের মহামান্য আপিল বিভাগের যুগান্তকরি এ রায়টির যুক্তির আবদেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

২.

মহামান্য আদালতের রায়ের একটি অংশে (৭১-৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন) মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদালতের কাছে জবাবদিহিতা না করার ব্যাপারটি কিছুটা আক্ষরিক অর্থে পাঠ করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হতে পারে। বিশেষত রায়ের ৭৪ পৃষ্ঠায় সংবিধানের ৪৮(৩) ও ৫১ অনুচ্ছেদ মিলিয়ে আদালতের কাছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির জবাব দিতে না হওয়ার ব্যাপারটি যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটি আমাদের উচ্চ আদালতের পূর্বতন রায়গুলোর সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক। যেমন, ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে ১০ অতিরিক্ত বিচারপতিদের একটি মামলাতেই (Govt. of Bangladesh v. M. Shamsul Huda & ors 60 DLR (AD) 124) সরকার দাবি করেছিলো রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী কি পরামর্শ দেন সেটি আদালত দেখতে চাইতে পারেন না। মহামান্য আপিল বিভাগ মানেন নি। বরং বলেছেন রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী কি পরামর্শ দিয়েছেন সেটি দেখতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী যে দলিলের ভিত্তিতে পরামর্শ দিয়েছেন সেটি আমরা দেখতে চাইতে পারি (ওই মামলার প্যারাগ্রাফ ১৯)।

একইভাবে ৫১ অনুচ্ছেদ নিয়েও আদালতের ঐতিহাসিক অবস্থান এ রায়ের কিছুটা বিপরীত। উচ্চ আদালত খন্দকার মোশতাক ও হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত কার্যকলাপ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা কিছু মামলায় রাষ্ট্রপতির ইমিউনিটিকে সীমিত করে দেখেছেন, শর্তহীন বলেন নি। তাছাড়া আদালত ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা ও বিবেচনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ১৯৯০ এর দশক থেকে আমরা জেনে এসেছি, আমাদের আদালত এ সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সাবজেকটিভ সেটিস্পেকশনের দাবি মানেন না। সবসময়ই অন্যেকটিভ সেটিস্পেকশনের পক্ষে অবস্থান নেন। এটি আমাদের একটি প্রতিষ্ঠিত ডকট্রিন। এমন কি ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি অবস্থার শেষের দিকে তখনকার অত্যন্ত ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষমতা চর্চাকে আদালত অবলীলায় প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিশেষত ওই সময়ের বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তাঁর বিভিন্ন রায়গুলোতে বাংলদেশ একচেটিয়া রাষ্ট্রপতিতন্ত্র নয় বলেই মত দেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সীমিত পাঠ সংসদীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক জবাবদিহিতারও দাবি।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি-র রায়টিতে কিছুটা অস্বস্তিকর আরেকটি ব্যাপার হলো সংবিধানিক আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ নন এমন একজন একেবারে অখ্যাত নবীন ছাত্রের একটি অখ্যাত ওয়েবসাইটে দেয়া ব্লগ পোষ্টকে রায়ের চার্ পৃষ্ঠা জুড়ে উল্লেখ করা (পূর্ণ রায়ের ৫৮-৬২ পৃষ্ঠা দেখুন)। স্পষ্টতই http://www.mazellaws.com নামের ওই ওয়েবসাইটটি কোন একাডেমিক পিয়ার রিভিউ করা মানসম্পন্ন জার্নাল প্রকাশ করে না। এটি একটি সাধারণ তথ্যভান্ডার যেটি পরিচালনা করেন “a group of enthusiastic individuals who want to voice their opinions and channel their inner intellect on a plethora of matters”. খুব সম্ভবত মহামান্য আদালতের গবেষণা দলের অসতর্কতায় আলোচ্য ব্লগটি প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে , “Recently an Article has been published in a foreign law journal namely, ‘Mazellaws Digest’” (পূর্ণ রায়ের ৫৮-৬২ পৃষ্ঠা দেখুন)।

এটি একটি অতি সাধারণ কোন ধরণের রেফারেন্সবিহীন ব্লগ পোষ্ট হলেও, যেহেতু আদালতের রায়ে এসেছে সেহেতু আমি লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। সাংবিধানিক আইনে আলোচ্য লেখকের বোঝাপড়া একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ের বলেই প্রতীয়মান হয় যখন তিনি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে প্রায় জবাবদিহিতার উর্ধে প্রমাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির বিচারক নিয়োগের দাফতরিক কাজের সাথে অসদাচরণের দায়ে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়াকে গুলিয়ে ফেলেন। সংবিধানের ৫২(২) অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে উক্ত লেখক দাবি করেন, রাষ্ট্রপতির কোন আচরণ আদালতের কাছে বা ও অন্য কোথাও রেফার করার ক্ষমতা কেবলমাত্র সংসদের। সন্দেহ নেই, এ যুক্তিটি একেবারে বালখিল্যতাপূর্ণ এবং সারবত্তাহীন। ৫২ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাক্তিগত আচরণজনিত কারণে সৃষ্ট সংসদীয় অভিশংসন প্রক্রিয়া। এখন এই নবীন লেখক যদি বলতে চান, কেবল মাত্র ৫২ অনুচ্ছেদের সংসদীয় অভিসংশন প্রক্রিয়ায় ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতির আর কোন কিছুই কেউ আদালতের প্রেরণ করতে পারবেন না, তাহলে রাষ্ট্র বা সরকারের কোন কাজই বা রষ্ট্রপতির কোন বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তই আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কারণ সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের সব কাজই রাষ্ট্রপতির নামে এবং অনুমোদনে করতে হয়। বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে বা অধ্যাদেশ জারির প্রশ্নে বা যে কোন সাংবিধানিক ও দাফতরিক কাজ ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক রাষ্ট্ৰপতির (প্ৰকৃতপক্ষে সরকারের তথা রাষ্ট্রের) বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রাখেন। সংবিধানের ৪৪ ও ১০২ অনুচ্ছেদের মূল কথা এটা।

অন্যদিকে ৫১ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতি-র বাক্তিগত দায়মুক্তি প্রসঙ্গে। এটি উনার দাফতরিক জবাবদিহিতা থেকে দায়মুক্তি নয়। ৫২ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাক্তিগত আচরণজনিত কারণে সৃষ্ঠ সংসদীয় অভিশংসন প্রক্রিয়া। এগুলোর সাথে রাষ্ট্রের দাফতরিক কাজকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে করা রিট মামলাকে গুলিয়ে ফেলা যায় না। তাছাড়া ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ নিয়ে মহামান্য আপিল বিভাগের আরেকটি বিপরীতধর্মী রায় আমি আগের প্যারাফগ্রাফেই উল্লেখ করেছি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, State v. Abdul Khaleque 49 DLR (AD) (1997) 154 মামলায় মহামান্য আপিল বিভাগ অখ্যাত প্রকাশনার অখ্যাত লেখকের ছোট একটি বই রেফারেন্স হিসেবে গ্রহন করতে অস্বীকার করেন এই বলে যে, “It is a tiny booklet perhaps meant for busy trial lawyers dealing with various subjects relating to criminal trial gandoisely dedicated to “New Swimmers of Occans of Law.”

সবশেষে উল্লেখ্য যে, এস পি গুপ্ত মামলা ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা-র বিচারিক নিরীক্ষা প্রসঙ্গে এই মূল্যায়নের বক্তব্যগুলোর জোরালো সমর্থন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন এবং বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এর রায়ে পাওয়া যায় (পূর্ণ রায়ের ৯৫, ৯৯ এবং ১০১-১০৮ পৃষ্ঠা দেখুন) ।

রায়ের সুদূর প্রসারী সম্ভাবনা

রায়টি পুরো পড়ে আমার মনে হয়েছে এটি আসলে ১০ অতিরিক্ত বিচারপতির মামলায় (Bangladesh & Justice Syed Dastagir Hossain v. Idrisur Rahman 15 BLC (AD) 49) এন্টিসিডেন্ট বা যোগ্যতার শর্ত পূরণের প্রশ্ন এবং জুডিশিয়াল একুমেন (বিজ্ঞতা) এর প্রশ্নে যে পার্থক্য করা হয়েছে তার উপর। আমার জানামতে ওই মামলায় ১০ বিচারপতির যোগ্যতার শর্ত নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠে নি। প্রকৃতপক্ষে ওই সময় চার্ দলীয় জোট সরকার আদালতকে বলেননি তারা কি বিবেচনায় ১০ বিচারপতিকে বাদ দিয়েছিলেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টকে বলতে হয়েছে বিবেচনা জুডিশিয়াল একুমেন হলে প্রধান বিচারপতির মতামত প্রাধান্য পাবে (ডোমিনেন্ট হবে)। বিবেচনা চাকুরীর যোগ্যতার শর্ত পূরণ হলে হয়তো প্রধান বিচারপতির মতামত ডরমেন্ট হবে। এটি ছিলো একটি দৃশ্যকল্প। ওই মামলার ঘটনা নয়। এবারে এটি মামলার ঘটনা। সুতরাং মহামান্য প্রধান বিচারপতির রায়ের একটি অংশে যথাযথভাবেই (৬৩-৬৮ পৃষ্ঠা দেখুন) এটির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। মাননীয় বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান এর রায়েও আমরা এর দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি (রায়ের ১৬-১৭ পৃষ্ঠা দেখুন)। রায়ের অন্যান্য অংশেও এটি ভালোভাবে এসেছে। আমার মনে হয় এ মামলার জুরিসপ্রুডেনসিয়াল কন্ট্রিবিউশন এখানে এবং এ অংশটুকু ভবিষ্যতে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় আদালতগুলোকে পথ দেখলে অবাক হবো না। আমি অদূর ভবিষ্যতে এ ধারণাটি নিয়ে আরো গবেষণা করতে চাই।

(ঋণ স্বীকার: সম্প্রতি প্রকাশিত রায়টি আমার নজরে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী মোকাররামুছ সাকলানের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। রায়ের শ্রদ্ধাপূর্ণ একাডেমিক সমালোচনা ও অন্যান্য মতামত একান্তই আমার।)

লেখক: ড. এম জসিম আলী চৌধুরী; প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব হল, যুক্তরাজ্য। ই-মেইল: j.chowdhury@hull.ac.uk