চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা!

জমির বায়না দলিল কার্যকর কিংবা বাতিলের আইনী প্রক্রিয়া!

সিরাজ প্রামাণিক: আপনি জমি বায়না করেছেন কিংবা চুক্তি করেছেন কিন্তু এখন তিনি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে কিংবা রেজিস্ট্রি করে নিতে অর্থাৎ বায়না চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। বায়না দলিল অনুযায়ী আপনি জমি রেজিষ্ট্রি করিয়ে দিতে কিংবা রেজিষ্ট্রি করিয়ে নিতে অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নে যে কোন পক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন কিংবা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন।

সম্পত্তি হস্থান্তর আইনের ৫৩ (খ) ধারা মতে বায়না বলবৎ থাকাবস্থায় বায়নাকৃত স্থাবর সম্পত্তি বায়না গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কারো নিকট বিক্রয় করা যাবে না। যদি না বায়না দলিলটি আইনসম্মত ভাবে বাতিল করা না হয়। অনেক সময় জমির ক্রেতা সময় মতো টাকা জোগার করতে না পারলে এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বায়না চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে কি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজী আছে কি—না।

যদি দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজী থাকে তবে ব্যাপারটি খুব সহজ। কিন্তু উভয় পক্ষ যদি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি না থাকে তবে কাজটি একটু কঠিন হয়ে যায়। যদি জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি হলে, উভয়পক্ষ একত্রে সংশ্লিষ্ট সাব—রেজিস্টি্র অফিসে গিয়ে পূর্বের বায়না দলিলটি বাতিলের জন্য ‘বাতিল দলিল’ করতে হবে। উক্ত দলিলে বায়না দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে স্বাক্ষর দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে হবে। তাহলেই উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাবে।

আর যদি জমির ক্রেতা চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজী না থাকে। এক্ষেত্রে আইনজীবীর কাছে গিয়ে উক্ত বায়না দলিলের ক্রেতা বরাবর একটি উকিল নোটিশ দিতে হবে। উক্ত নোটিশে ক্রেতাকে বায়না দলিলের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য কয়েকদিন সময় দিতে পারেন এবং আরো উল্লেখ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উকিল নোটিশ প্রাপ্তির পর ক্রেতা সময় মতো টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় তাহলে ভাল। সেটা না হলে বিক্রেতা আদালতে গিয়ে যথাযথ কারণ দেখিয়ে বায়না চুক্তি বাতিলের মামলা করতে পারে।

ভুক্তভোগী পক্ষ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ১২ ধারা মতে আদালতে চুক্তি প্রবলের মামলা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এরকম মামলা করতে হলে চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে বা চুক্তি অস্বীকারের তারিখ হতে এক বছরের মধ্যে করতে হবে। এ আইনের ২১ (এ) ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবত করতে হলে আপনাকে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

১। চুক্তি বা বায়নানামাটি লিখিত ও রেজিস্টি্রকৃত হতে হবে নতুবা চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না।

২। বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে এ মামলা দায়ের করা যাবে না।

আদালত সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলে উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল করে দিতে পারে। আবার আদালত জমির বিক্রেতার ক্ষতিপূরণ হিসাবে বায়না চুক্তির টাকা বিক্রেতার কাছে রেখে দেওয়ার আদেশ দিতে পারে। আদালতের বায়না চুক্তিটি বাতিলের রায় পাওয়ার পর জমির মালিক পুনরায় জমিটি অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইনের শিক্ষক ও আইন গবেষক। ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com