বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের (বিডিএস) লক্ষ্য হচ্ছে, ‘১ ব্যক্তি, ১ খতিয়ান ও ১ দাগ’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর বাস্তবায়ন ঘটলে ভূমি বিষয়ক নাগরিকদের হয়রানি এবং মামলা-মোকদ্দমার পরিমাণ অনেকাংশে কমবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম’ বিষয়ক এক সেমিনারে বুধবার (১৫ মে) প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ একথা বলেন।
বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) আওতাভুক্ত অন্যতম ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্প সেমিনারটি আয়োজন করে।
এসময় ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান সভাপতি হিসেবে এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। ইডিএলএমএস প্রকল্প পরিচালক মো: জহুরুল হক বিডিএস বিষয়ে এক সচিত্র উপস্থাপনা করেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের সফল বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে একটি ন্যায্য ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল জরিপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা জারি শিগগিরই
ভূমিমন্ত্রী এসময় আশপ্রকাশ করে বলেন, আগামী জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ছয়টি এলাকায় বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের আওতায় ম্যাপ প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা দ্রুত সফলভাবে শেষ হবে।
যোগাযোগ ও প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিডিএস অপারেশনে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে – তিনি এসময় যোগ করেন।
ভূমি সচিব এসময় জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে প্রদত্ত ৩১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অন্যতম বাস্তবায়ন হিসেবে ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন ও বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমি সম্পর্কিত লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ায় দুর্নীতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের (এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প) মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জিএনএসএস, টোটাল সার্ভে সিস্টেম, ড্রোন, ওরাকল ডাটা ও জিআইএস সফটওয়্যারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরীয় সহায়তায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে বিডিএস পরিচালনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নবম শ্রেণির শিক্ষাক্রমে ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান সংযোজন
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেমিনারে বলেন, বিডিএস অপারেশনে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হবে। জরিপের সময় যদি সিলিং বহির্ভূত জমি পাওয়া যায়, তাহলে অতিরিক্ত জমি খাস খতিয়ানে এনে বাকি জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হবে। আর সরকারি জমির ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করা হবে।
তাছাড়া বিডিএস-এর আওতায় তৈরিকৃত ডিজিটাল ম্যাপে ক্লিক করলেই জমির সব তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়াও রেকর্ড সংশোধন করলে ডিজিটালি ম্যাপ পার্টিশন হয়ে যাবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ডিএলআরএস পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখ, ডিএলআরএস পরিচালক মোঃ মোমিনুর রশীদ, ঢাকার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো: মিজানুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ও ইডিএলএমএস প্রকল্প এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং দক্ষিণ কোরিয়া হতে আগত প্রকল্পের সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইসহ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরবৃব্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন, অংশীজন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অন্য আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আরও ৩২টি উপজেলায় বিডিএস অপারেশন শুরু করা হবে।