সম্রাটের জামিন বাতিলে আবেদনের অনুমতি পেল দুদক

বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে দুদকের রিট শুনানির আগেই দেশ ছেড়েছেন সম্রাট

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে গেছেন। চিকিৎসার জন্য শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে তিনি ভারতে গেছেন।

সম্রাটের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে দুদকের দায়ের করা আবেদনের শুনানিতে আজ রোববার (১৬ জুলাই) তার অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী হাইকোর্টকে এ তথ্য জানান।

এ প্রেক্ষিতে আদালত এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন। রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

পরে আইনজীবী মনসুরুল হক বলেন, বিচারিক আদালতের আদেশ অনুসারে সম্রাট চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন। পরে আদালত বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তা জানাতে বলেন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন।

এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত সম্রাটের পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ আদেশ দেন।

ওইদিন আইনজীবী আফরোজা বলেছিলেন, তার মক্কেল (সম্রাট) কিডনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আগেই আবেদন করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয় আদালতের কাছে। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী আফরোজা আরও বলেন, সম্রাটের পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ হয়েছে। তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সম্রাট এক মাস বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন। আর তিনি তার পাসপোর্ট সর্বোচ্চ দুই মাস নিজের জিম্মায় রাখতে পারবেন। পরে তাকে তাঁর পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।

পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতির আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তাঁর সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গ্রেপ্তারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়। পরে সম্রাটকে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখানে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদক ও অস্ত্র পাওয়ার কথা বলা হয়। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পরবর্তীতে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া অভিযোগপত্রে ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ টাকা তিনি পাচার করেছেন। গত বছরের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত।