চট্টগ্রামে ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৮৮ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৭ টাকা খেলাপি ঋণের মামলায় রতনপুর গ্রুপের মালিক মাকসুদুর রহমান, তাঁর দুই ছেলেসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান রোববার (১৬ জুলাই) এ আদেশ দিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্য তিনজন হলেন– মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের কর্ণধার মিজানুর রহমান, মারজানুর রহমান ও মো. আলাউদ্দিন। তাদের মধ্যে মিজানুর ও মারজানুর মাকসুদুর রহমানের ছেলে।
একই সঙ্গে ব্যাংক যথাসময়ে মামলা না করায় ব্যাংকটির সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখার ম্যানেজার শাহ মো. জাহেদ হোসাইনকে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চ ওই খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ মামলা করে ট্রাস্ট ব্যাংক। এতে দাবি করা হয়, ঋণখেলাপিরা বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ না করে দেশত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঋণের বিপরীতে খেলাপিদের কোনো স্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে বন্ধক নেই। তারা সংসদে ঘোষিত ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপির অন্যতম। ঋণ ২০১৫ সালে পুনর্গঠন ও ২০১৯ সালে পুনর্বিন্যাসসহ পুনঃতপশিল করা হয়। এর পরও তারা অর্থ ফেরত দেননি।
এদিকে ঋণ আদায়ে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আদেশের কপি পাঠাতে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং দায়িত্ব পালনে অবেহলার কারণ ব্যাখ্যা দিতে আগামী ৩১ জুলাই হাজিরার নির্দেশ দেন আদালত।
বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম, মাকসুদুর রহমান, মিজানুর রহমান, মারজানুর রহমান ও মো. আলাউদ্দিনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। তারা যেন আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ করতে না পারেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের কপি বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বিশেষ শাখা বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ শাখার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আদেশের কপি কেন পাঠানো হবে না, তা পরবর্তী ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের নামে নেয়া ১৮৮ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৭ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করে ট্রাস্ট ব্যাংক। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তারা আদালতে হাজির হননি। বিবাদীরা খেলাপি ঋণের দায় পরিশোধ না করে দেশত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঋণের বিপরীতে বিবাদীদের কোনো স্থাবর সম্পত্তি বাদী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ নেই। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাবিকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত বিআরপিডি সার্কুলারের আওতায় সুদ মওকুফ সুবিধাসহ দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধের কোনো সদিচ্ছা বিবাদীরা দেখাচ্ছেন না। বিবাদীরা দেশত্যাগ করতে পারলে জনগণের আমানতের বিপুল টাকা আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মামলার নথিতে আরো দেখা গেছে, পত্রিকার মাধ্যমে মামলার সমন জারি হয়েছে। বিবাদীদের আদালতে নিজে বা আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিবাদীরা আদালতে হাজির হননি।
এছাড়া ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি সহায়ক জামানত হিসেবে বাদী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ নেই। ট্রাস্ট রিসিট ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। ঋণগুলো ২০১৫ সালে পুনর্গঠন এবং ২০১৯ সালে পুনর্বিন্যাসসহ পুনঃতফশিল করা হয়। কিন্তু বিবাদীরা পুনঃতফশিল সূচি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করেননি।
২০১১ সালের ২৪ মার্চ পুনঃতফশিল মঞ্জুরিপত্র অনুযায়ী বিবাদীরা কিস্তির টাকা পরিশোধ না করলেও বাদী ব্যাংক বিবাদীদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৪৬ ধারা মোতাবেক যথাসময়ে মামলা দায়ের করেনি। জামানতবিহীন বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায়ে বাদী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে ট্রাস্টি অব পাবলিক মানি হিসেবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।