বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরও ২০ আসামির খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল আবেদন করা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা। সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
এ ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার কাজ হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক মামলার বিচারের দুই ধাপ শেষ হয়েছে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে। রায় কার্যকর করতে হলে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শেষ ধাপটি চলতি বছরই হতে পারে। হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এবং যাদের সাজা কমানো হয়েছে, তাদের সাজা বাড়াতে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিলও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথমে উভয়পক্ষের লিভ টু আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হবে। তারপর আপিলের শুনানি ও মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৩৩টি আপিল দাখিল করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর আপিল শুনানি হতে পারে।
২০০৯ সালের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরকে (বর্তমানে বিজিবি) রক্তাক্ত করে বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। হত্যা মামলার দুই ধাপ বিচার শেষ হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
পিলখানা হত্যার ঘটনায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে এরই মধ্যে বেশ কিছু আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ২০৩ আসামির পক্ষে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ৮২ জনের পক্ষে আপিল এবং বাকিদের পক্ষে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। আসামিদের পক্ষে একাধিক আইনজীবী বিলম্ব মওকুফের আবেদনসহ আপিল দাখিল করেছেন এবং করছেন বলে জানা গেছে।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দাখিল করতে হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রায়ের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১১ দফা পর্যবেক্ষণসহ ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় (ডেথ রেফারেন্স ও আপিল) প্রকাশিত হয়। কিন্তু করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ কারণে উভয়পক্ষের আপিল দাখিল করতে দেরি হয়। তাই প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়ে বিলম্ব মওকুফের আবেদনসহ আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় অন রেকর্ডের মাধ্যমে আপিল দাখিল করা হয়েছে।
প্রথম আপিল দাখিলের ব্যয় ১৮ লাখ টাকা: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল দাখিল করতে ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম আপিলটি করা হয়। এটি ছিল ৬৬ হাজার পৃষ্ঠার। বই বাইন্ডিং, রায়ের সার্টিফায়েড কপি, প্রতিটি চারশ পাতার ভলিয়ম তৈরি, প্রতিটি আপিল ১৪টি সেট প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ দাখিল করা হয়েছে। এরপর পেপারবুক ছাড়াই মেমো নম্বর দিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও ৪৭টি আপিল দাখিল করা হয়েছে।