উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা রয়েছে ৯৩ হাজার ১৫৬টি। এরমধ্যে সরকারের পক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২০টি, সরকারের বিপক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৭টি। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এমন ৬৫টি মামলা অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব মামলা সরকারের মাথা ব্যথার কারণ। তাই এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (আইন) এর নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সফটওয়্যারের কাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এছাড়াও, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তথ্য নির্বাচন করে তার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগের পদ্ধতি ও নীতিমালা প্রণয়ন করবে। যে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগে ১৫০০ এর অধিক মামলা রয়েছে। সেই সব মন্ত্রণালয়-বিভাগে আইন অনুবিভাগ সৃজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলার তথ্য পর্যালোচনা, মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধীনও দপ্তর সংস্থা এবং বিভাগীয় কমিশনারগণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে গত এপ্রিল থেকে জুন মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণ কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ সংক্রান্ত কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারের পক্ষে এবং বিপক্ষে রিট করা হয়েছে। এসব মামলা কেন বছরের পর বছর শেষ হচ্ছে না। আবার মামলাগুলো পরিচালনা করতে মন্ত্রণালয়ের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সে কারণে এবার মন্ত্রণালয় এবং স্ব-স্ব বিভাগের মামলা নিষ্পত্তি করতে চায় সরকার। এবার ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগে ১৫০০ এর অধিক মামলা রয়েছে সেগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ড্রাফট লিগাইজেশন সংক্রান্ত রিট পিটিশনগুলো শুরুতেই সরাসরি খারিজ করার জন্য সরকার পক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ ধরনের মামলার তথ্য সলিসিটর অনুবিভাগকে প্রদান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুলিপি পাঠাবে।
এতে আরও বলা হয়, আইন ও বিচার বিভাগ উচ্চ আদালতের মামলার প্রকার ও ধারাগুলো তামাদির বিধান এবং সরকারি স্বার্থ রক্ষার্থে কর্মকর্তাগণের করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণ প্রদানের জন্য অবিলম্বে প্রশিক্ষণ আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মন্ত্রণালয় বিভাগের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাগুলো সরকারের রায় হওয়া মামলার রায়-আদেশ পর্যালোচনা করে কি কারণে সরকারের বিপক্ষে আদেশ হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করে উত্তরণের লক্ষ্যে সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাবে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়-বিভাগসমূহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং কোনো বিষয়ে পরীবিক্ষণ কমিটিতে উপস্থাপনের প্রয়োজন হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য বা প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। একই বিষয়ের উপর একাধিক মামলা থাকলে তা চিহ্নিত করে মামলার নম্বর, মামলার বিষয় ও আদালতের নাম উল্লেখ করে অ্যানালজিজ হেয়ারিং এর মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সলিসিটরকে অনুরোধ করতে হবে। সলিসিটরর অনুবিভাগ এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কমিটি আরও জানায়, কোনো মামলায় সরকারের বিপক্ষে রায় বা আদেশ হলে যথাযথ ভিত্তি -যৌক্তিকতা উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল-রিভিউ দায়ের নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের মামলার বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট অফিসে সংরক্ষণ ও নিয়মিত তদারকি করতে হবে। এ ধরনের মামলার সমন্বিত তথ্য পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে হবে।
এরআগের সভায় কমিটি কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি মামলা নির্বাচন করা হল। মামলা গুলোর সর্বশেষ অবস্থা ও সরকার পক্ষে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গৃহীতব্য ব্যবস্থা বা পদক্ষেপের সুপারিশসহ আগামী সভায় উপস্থাপন করতে হবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলো ও সলিসিটর অনুবিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ আগামী সভার পূর্বে পরিবীক্ষণ কমিটিতে আলোচনাযোগ্য অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা শনাক্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তথ্য পাঠাবে।
সরকারের বিপক্ষে মামলাগুলোর বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদেরকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক অফিস থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে পরিবীক্ষণ কমিটিতে আলোচনাযোগ্য কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা (যদি থাকে) নির্বাচন করে তার তথ্য পাঠাতে হবে।
এছাড়া, নির্মাণাধীন ‘স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর কার্যক্রম জরুরিভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (আইন) এর নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সফটওয়্যারের কাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর আইন ও বিচার বিভাগ বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগের পদ্ধতি ও নীতিমালা প্রণয়ন করবে। অর্থ বিভাগ এতদসংক্রান্ত ব্যয়ের খাতসমূহ নির্ধারণ করে প্রদেয় সম্মানী বা ফি নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রস্তাব করা হয়, যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে ১৫০০ এর অধিক মামলা রয়েছে, সে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে আইন অনুবিভাগ সৃজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনায় সুষ্ঠু কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা, সুসমন্বয় ও যোগাযোগের সুবিধার্থে অ্যাটর্নি জেনারেল-সলিসিটর অফিসে সরকারি কর্মকর্তাগণের স্বতন্ত্র কক্ষ-অপেক্ষা কক্ষ নির্ধারণসহ সার্বিক বিষয়ে বিদ্যমান অসুবিধা চিহ্নিত করে সভায় উপস্থাপন করতে হবে।
উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত এপ্রিল-জুন দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৯২৬টি, বিবেচ্য সময়কালের পূর্ব পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ২৩০টি, মামলার মোট সংখ্যা ৯৩ হাজার ১৫৬টি। সরকার পক্ষে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৫২০, সরকার বিপক্ষে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১১৭, বিবেচ্য সময়কালের শেষ কার্যদিবসে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১৯।
আর ১৫০০ অধিক মামলা রয়েছে এমন মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
ইতোপূর্বে ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ১০০টি মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিপুল সংখ্যক মামলা থেকে কমিটিতে আলোচনাযোগ্য অতিগুরুত্বপূর্ণ মামলা শনাক্ত করা দুরূহ। এ বিষয়টি আলোচনা করা হয় এবং সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত পূর্ণ মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে পরিবীক্ষণ কমিটিতে আলোচনাযোগ্য অতিগুরুত্বপূর্ণ মামলা শনাক্ত করে বিভাগীয় কমিশনারগণকে তথ্য পাঠাতে বলা হয়।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকল্পে ঢাকা বিভাগ থেকে ৪২৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৫০টি, খুলনা বিভাগ থেকে ১০০টি, বরিশাল বিভাগ থেকে ৭৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ১৫টি, সিলেট বিভাগ থেকে ৭টি এবং রংপুর বিভাগ থেকে ২৮টিসহ মোট ৮০৪টি মামলাকে অতিগুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি।