নওগাঁয় দুই সহোদর তাদের স্ত্রীদের দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন। অবশেষে ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় দুই গৃহবধূর প্রত্যেকের তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে এ রায় প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শর্মাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দিয়ে আপন ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
তদন্ত শেষে থানার এসআই আব্দুল আজিজ মামলাটির ঘটনা মিথ্যা মর্মে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালতে নারাজী দাখিল না হলে তার ছোট ভাই ২০২২ সালের ১১ আগস্ট তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করায় ভাবীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত ফরিয়াদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামি ভাবীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে তা খারিজ হয়।
একইভাবে ছোট ভাই তার স্ত্রীকে দিয়ে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ২০২১ সালের ১৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হলে ট্রাইব্যুনাল ফরিয়াদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করেন। উভয় মামলার একই তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আজিজ তদন্ত শেষে এই ঘটনাটি মিথ্যা দাবি করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনালে কোনো নারাজী দাখিল না হওয়ায় বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা করায় আদালতে একটি নালিশী দরখাস্ত দায়ের করেন। আদালত ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
গত ১৪ মে নালিশী মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত করা হয়। ২২ মে উভয় নালিশী মামলার যুক্তিতর্ক শোনা হয়। ফরিয়াদী পক্ষ উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে মামলাটি খারিজ হয় মর্মে আদালতকে অবহিত করেন।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বৃহস্পতিবার আপন দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রীর প্রত্যেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন তিনি।
রাষ্ট্র পক্ষে বিশেষ কৌশলী অ্যাডভোকেট মো. মকবুল হোসেন ও আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হক সোহেল মামলাটি পরিচালনা করেন।
আপন ভাইদের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণের মামলায় শাস্তি প্রদানের বিষয়টি আদালতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রায়ে রাষ্টপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে যাবে মর্মে জানান।
বিচার প্রার্থী জনগণ ও আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এরকম দৃষ্টান্তমূলক রায় হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে।