সড়ক নির্মাণের অজুহাত দেখিয়ে ৩০টি তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির আরও অন্তত ৪০টি গাছের চারা উপড়ে ফেলার ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবাহান হাওলাদারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে আজ রোববার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত তাদের বরখাস্তের পাশাপাশি চেয়ারম্যানসহ দুইজনকে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন।
৯০ দিনের মধ্যে এই জরিমানার অর্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিতে বলেছেন আদালত। নির্বাহী কর্মকর্তাকে জরিমানাকৃত টাকা দিয়ে সেখানে তালগাছ লাগাতে এবং তা সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৬ মে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে এক্সকাভেটর দিয়ে অন্তত ৩০টি তালগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। তালগাছগুলোর বয়স ছিল ২৫ থেকে ৩০ বছর। তালগাছের পাশাপাশি এ সড়কে বন বিভাগের রোপণ করা বিভিন্ন প্রজাতির আরও অন্তত ৪০টি গাছের চারাও উপড়ে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবাহান হাওলাদারের নির্দেশে এসব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সড়কের পাশে যারা এসব তালগাছ রোপণ করেছেন, তারা ইউপি চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখে কিছু না বললেও ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন।
এতে আরও বলা হয়, পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণ করার জন্য প্রচার চালানো হলেও জনপ্রতিনিধিরা তা মানছেন না। শুধু তাই নয়, প্রকৃতিপ্রেমী সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছায় লাগানো তালগাছগুলোও তারা রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উল্টো কেউ কেউ সেগুলোর ক্ষতিই করছেন। বীজ থেকে পরিপূর্ণ গাছ হতে দীর্ঘ সময় লাগে একটি তালগাছের।
ফলে অনুমতি নিয়েও তালগাছ কাটার কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়। সেখানে অনুমতি ছাড়াই এতগুলো তালগাছ এক সপ্তাহ ধরে এক্সকাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু কারও কোনো খবর হলো না? এসব গাছ বাঁচাতে বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনসহ কেউই এগিয়ে এলো না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
অনুমতি ছাড়াই সড়কের দুপাশের তালগাছ কাটার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারকে তলব করেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের নামে বন বিভাগের লাগানো এসব তাল গাছ কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তার ব্যাখ্যাও চান আদালত।
গত ৭ মে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদেশে ১৮ মে তাদের স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এরপর নির্ধারিত দিনে ১৮ মে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলু গাজী ও স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোবাহান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিপালন করতে বলেন আদালত। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বরখাস্তের আদেশ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়। রুল শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।