মুহাম্মদ মনজিলুল আমিন: সংবিধান একটি দেশের দর্পণ স্বরূপ। এটি এমন একটি আইন বা একাধিক আইনের সম্বলিত বিষয় যেখানে একটি দেশ পরিচালনার মৌলিক নিয়ম কানুন, জনগণের মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্রের লক্ষ্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সম্পর্কে মৌলিক বিধান লিপিবদ্ধ থাকে। সেই কারণেই সংবিধানের প্রাধান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংবিধানের প্রাধান্য (Supremacy of the Constitution) বলতে বুঝায় সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অর্থাৎ অন্য সকল আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্যথায় আইনের সস্পূর্ণ অংশ বা যতটুকু অংশ অসমঞ্জস্যপূর্ণ ততটুকু অংশ বাতিল বলে বিবেচিত হবে।
মনে রাখতে হবে “সংবিধানের প্রাধান্য” ধারণাটি লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। যেসব দেশে যেমন- যুক্তরাজ্যে অলিখিত সংবিধান থাকায় সংসদ সার্বভৌম এবং সেখানে সংবিধানের প্রাধান্য ধারণাটি অচল। পক্ষান্তরে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশের লিখিত সংবিধান আছে এবং “সংবিধানের প্রাধান্য” কথাটি স্পষ্টভাবে উল্ল্যেখ আছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে সংবিধানের প্রাধান্য কথাটি স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে। সেখানে বলা আছে, সংবিধানের জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি। তাই সংবিধানই হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।
এছাড়া সংবিধানের ৭ক এবং ৭খ অনুচ্ছেদে বলা আছে যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগের মাধ্যমে অসাংবিধানিক উপায়ে সংবিধান সংশোধন, পরিবর্তন, রহিতকরণ বা বাতিল করে তবে সেটি রাষ্ট্রদ্রোহী বলে গণ্য হবে এবং এ জন্য শাস্তি পেতে হবে (রাষ্ট্রদ্রোহী সম্পর্কে দণ্ডবিধির ১২৪ক ধারায় বিধান বর্ণিত আছে)।
সংবিধানের প্রাধান্য ধারণাটি সংবিধানের ২৬ ও ১০২ নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করণের করণীয় সম্পর্কিত বিধানেও সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। একইভাবে সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সংবিধানের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে সংসদ আইন প্রণয়ন করবে।
আবার ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হলেও ৭খ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংবিধানের কাঠমো ক্ষুন্ন করা যাবে না। অর্থাৎ ৭খ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিধানাবলি যেমন: ১ম-৩য় ভাগের বিধান সংশোধন করা যাবে না। এভাবে দেখা যায় যে, সংবিধানের বিভিন্ন বিধানে সংবিধানের প্রাধান্যকে নানাভাবে বিধৃত আছে।
সংবিধানের প্রাধান্যতে সবার ভূমিকা থাকলেও আদালতের ভূমিকা খুবই স্পষ্ট। কেননা কোন আইন বা কোন কাজ এর মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা তা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে আদালতের সিদ্ধান্তের উপর।
কিন্ত অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। যেহেতু সংবিধান রাষ্ট্রের জনগণের জন্য সেহেতু সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করা ও সেটা রক্ষন, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।