ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতির কথা গণমাধ্যমে জানানো ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করার জেরে সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া বরখাস্ত হতে পারেন। এরই মধ্যে তাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সোমবারই আইন মন্ত্রণালয় থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করতে সলিসিটর উইংকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সলিসিটর কার্যালয়।
সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে অসদাচারণ, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ আনা হতে পারে।
এর আগে সোমবার সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৭৫ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে— এমরান আহমেদ ভূঁইয়া এমন কথা বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে, সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন। সেই বিবৃতিতে তারা স্বাক্ষর দিচ্ছেন। তার একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি ছাড়া কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি দেখবো বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপুটি। তিনি যদি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তবে হয় তাকে পদত্যাগ করে কথা বলতে হবে, অথবা তাকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তিনি এমনটা করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।
তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আমি দেখবো।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এই খোলা চিঠির প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের বিবৃতি লেখা কাগজে আইনজীবীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে আইনজীবীদের ‘নাম’ ও ‘স্বাক্ষর’-ঘর রয়েছে।