প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচারক–সংকটের কারণে মামলার জট কমানো যাচ্ছে না। অনেক কমসংখ্যক বিচারক দিয়েই মামলা চালাতে হচ্ছে। আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে মামলার জট কমে আসবে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছয়তলাবিশিষ্ট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন। পরে কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট সহ সারাদেশে ৪৩ লাখ মামলা পরিচালনা করতে হয় মাত্র দুই হাজার বিচারক দিয়ে। মামলার জট কমাতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ বিচার বিভাগের স্টাফদেরও সহায়তা দরকার। এত কম সংখ্যক বিচারক দিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা বহির্বিশ্বে আর কোথাও এমনটি নেই।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে এ কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১০০ বিঘা আয়তনের এ কলেজের ভবন, চেয়ার-টেবিল, গাছগাছালি—সবই তাঁর পরিচিত। এখানকার গাছতলায় ও মাঠে বসে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। গল্প করেছেন। সাতক্ষীরায় লেখাপড়া করার সময়টাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় ছিল।
কলেজের ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন ও ধারণ করতে হবে। সততাকে ধর্ম হিসেবে পালন করতে হবে ও লালন করতে হবে। সততা মন থেকে পালন করতে হবে। লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে সংগ্রাম করতে করতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছি। সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না। সুতরাং ওপরে উঠতে গেলে সংগ্রাম করতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সততাকে ধর্ম হিসেবে পালন করতে হবে।’
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ আল হাদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ; জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আবদুল আলীম আল রাজী; জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এবং পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহম্মদ সাইফুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে ঢাকা থেকে সকাল সোয়া ১০টায় প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে পৌঁছান। এরপর সাতক্ষীরার বিচারকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। পরে বেলা ১১টায় তিনি সাতক্ষীরা জজ কোর্ট চত্বরে নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ ভবনের কাজ পরিদর্শন করেন। বিকেল চারটায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।