বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে তিন জন সাক্ষী আনার বিষয়ে আদালত অনুমতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
কেরানীগঞ্জ কারাগার সংলগ্ন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিদেশি সাক্ষী আনার আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতে সাক্ষী আনার জন্য আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নাইকো দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে বিদেশি সাক্ষী হাজির করতে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত রবিবার সাক্ষী হাজির করতে অনুমতি দিয়েছেন। এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে তিন জন বিদেশি সাক্ষী আসবেন।’
সাক্ষীরা কবে আসবেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখনও সেটির দিন ঠিক হয়নি।’
এদিকে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এ মামলায় রয়্যাল কানাডিয়ান পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের তদন্তকারীদের সাক্ষী করেছি। এ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আমরা আদালতে একটি আবেদন করেছি। তার কারণ, এ মামলার তদন্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও কানাডার মাউন্টেড পুলিশের মতো দুটি সংস্থা। যাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে—নাইকোকে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির বিষয়টি।’
এর আগে কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রায় ১৬ বছর ঝুলে থাকার পর আইনি জটিলতা কাটিয়ে সম্প্রতি আলোচিত এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি হন বিএনপির চেয়ারপারসন।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে সরকারে থাকাকালে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কানাডার কোম্পানিটিকে অবৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুবিধা পাইয়ে দেন।
খালেদা জিয়া ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এরমধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন। বাকিরা জামিনে আছেন।
এ মামলায় গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।