অবকাশে হাইকোর্টের বিচারকাজ পরিচালনায় ৬ বেঞ্চ গঠন
সুপ্রিম কোর্ট

দেশজুড়ে কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প সংকট, ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব নিম্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও’র স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) এসকেএম তোফায়েল হোসেনের সই করা চিঠিতে রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রইফ তালকুদারকে এই চিঠি পাঠানো হয়। একইসঙ্গে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে চিঠির একটি অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে যা বলা হয়েছে

চিঠিতে বলা হয়, ‘উপযুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ এবং দেশের ৬৪টি জেলার অধস্তন আদালতে প্রতি কার্যদিবসে বিচারপ্রার্থী জনগণের পক্ষে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য দরখাস্ত দাখিলের সময় জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়। আদালতে দাখিলকৃত স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি’র মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ বাজস্ব পেয়ে থাকে। জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছিল।’

‘নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি শনাক্তকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড (এসপিসিবিএল), ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে কিছু স্বল্প মেয়াদি ও কিছু দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আইসিডি ইউভি এলইডি ফ্লাশ লাইট (ইউভি-৩৬৫এনএম) ডিভাইস ব্যবহার করে নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি শনাক্তকরণের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সম্পাদককে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এছাড়া নিম্ন আদালতে আইসিডি ইউভি এলইডি ফ্লাশ লাইট (ইউভি-৩৬৫এনএম) ডিভাইস বিতরণ করে।’

‘সম্প্রতি উচ্চ আদালতের গোচরীভূত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের ৬৪টি জেলায় স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও’র সংকট বিরাজ করছে। বিচারপ্রার্থীদের বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে ভেন্ডারদের কাছ থেকে এসব কিনতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভেন্ডারদের অভিযোগ— ট্রেজারিতে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও-এর চরম সংকট থাকায় ট্রেজারি শাখা থেকে চাহিদামতো স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও’র সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।’

এমতাবস্থায় এই চিঠিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও’র স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি কী

জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এক ধরনের কাগজের পাতার স্ট্যাম্প যেগুলো মামলার আবেদন, মামলা দায়ের, ওকালতনামা, এফিডেভিট প্রদান এবং রায় ও আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ‘স্ট্যাম্প কোর্ট ফি’ নামে পরিচিত। দেশের সব আদালতেই জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প অত্যাবশ্যকীয় একটি উপকরণ।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ১ হাজার নতুন মামলা রুজু হয়। আদালতে মামলা করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আবেদন এবং আদেশ বা রায়ের অনুলিপি সংগ্রহ করার প্রতিটি পর্যায়ে সরকারকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। আদালতে এটা কোর্ট ফি নামে পরিচিত। এই কোর্ট ফি দেওয়া হয় ডাক টিকিট সদৃশ প্রতীকী কাগুজে ফির মাধ্যমে।

বর্তমানে ৩৪টি ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক মামলা, ক্ষতিপূরণ, বাজারমূল্য আছে বা নেই এ রকম স্থাবর সম্পত্তি, দখল পুনরুদ্ধার, নিষেধাজ্ঞা, মুসলিম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়, দলিল রদ, দলিল সংশোধন, চুক্তি রদ, ঘোষণা মামলা-পরবর্তী প্রতিকার, চুক্তি প্রবল, ইজমেন্ট অধিকার, বন্ধক খালাস, ফোরক্লোসার, মোহরানা, ভরণপোষণ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, সাধারণ ঘোষণা, বাটোয়ারা ও পৃথক দখল, ভাড়া, ডিক্রি রদ, ঘোষণা ও নিষেধাজ্ঞা, আপিল ও রিভিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়ের হওয়া মামলা।