বিএনপির প্রয়াত নেতা নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ‘তৃণমূল বিএনপি’তে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নব নির্বাচিত কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশানুর রহমান এ কমিটি ঘোষণা করেন।
ঘোষিত কমিটিতে শমসের মবিন চৌধুরীকে দলের চেয়ারম্যান আর তৈমুর আলম খন্দকারকে দলের মহাসচিব করা হয়েছে। পাশাপাশি দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অন্তরা হুদা নির্বাচিত হয়েছেন এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন।
দলের কো-চেয়ারপারসন করা হয়েছে কে এ জাহাঙ্গীর মাজমাদারকে। ভাইস চেয়ারপারসন হয়েছেন— মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, মোখলেছুর রহমান, দিপক কুমার পালিত, মেনোয়াল সরকার, ছালাম মাহমুদ।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান, যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল করিম, মাছুদুর রহমান, ফয়েজ চৌধুরী, তালুতদার জহিরুল হক, রোকসানা আমিন সুরমা। কোষাধ্যক্ষ মো. শামীম আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, আকবর খান, কামাল মোড়ল, দপ্তর সম্পাদক এ কে সাইদুর রহমান, মোহাম্মদ রাজু মিয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল সবুজ, যুব বিষয়ক সম্পাদক শাহাব উদ্দীন ইকবাল, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশানুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক স্থপতি নাজমুন সাকিব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাগর ঘোষ ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক ফরহাদ হোসেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টায় তৃণমূল বিএনপির সম্মেলনের শুরুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা তার স্বাগত বক্তব্যে বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারকে দলে স্বাগত জানান।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ৩০০ সংসদ সদস্য এই ১৭ কোটি মানুষের নেতৃত্ব দিতে পারবেন? আমি মনে করি, না। আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্য অনেক বেশি নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে হবে। এই ধরনের সুপারিশ তৃণমূলের ইশতেহারে থাকবে।
সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যত পদক্ষেপ নেবে তাতে তৃণমূল বিএনপির সহযোগিতা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন শমসের মবিন। তিনি বলেন, আমরা লগি-বৈঠার হত্যা দেখতে চাই না। বাস-ট্রাক পোড়ানোর সহিংসতাও দেখতে চাই না।
সাবেক এই বিএনপির নেতা বলেন, আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেটা সম্ভব যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন যদি তার ক্ষমতার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। শুধু তাই নয়, আমার ভোট যদি সঠিকভাবে গণনা হয়, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি একটা রাজনৈতিক দল করেছি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজনীতি করেছি। আজ আমি তার মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়ার পর দেড় বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। এই দেড় বছর আমি বিএনপির পতাকা বহন করেছি।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি মনে করি, আগে যে দল করতাম সেটার সঙ্গে আদর্শগত ও জাতীয়বাদের মিল রয়েছে তৃণমূল বিএনপির। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। এই জন্য এই দলে এসেছি।
তিনি বলেন, দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছি। এই দল প্রাইভেট কোম্পানির হবে না। এখানে সবার মূল্যায়ন করা হবে।
এডিসি হারুন অর রশিদ যদি বিরোধী দলের কাউকে পেটাতো তাহলে তার প্রমোশন হতো বলে দাবি করেন তৈমুর আলম। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে পেটানোর কারণে আজ তার শাস্তি হয়েছে। যেমন বিএনপির সংসদ সদস্য জয়নুল আবেদিনকে পেটানোর কারণে আরেক হারুনের প্রমোশন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি সংসদ সদস্য তার নিজ এলাকায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করেছে। সেখানে বাস, ট্রাকসহ যে কোনো কিছু পরিচালনা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। আজ যদি দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানো যেতো তাহলে দেশে এতো হানাহানি থাকতো না। কোথাও গণতন্ত্র নেই। পুলিশ বলে, ডিসি বলে সরকারি দলকে ভোট দিতে হবে।
তৃণমূল বিএনপির সম্মেলনে নিবন্ধনহীন ২০টির বেশি দল অংশ নেয়। এতে উপস্থিত ছিলেন— বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, প্রগতিশীল ইসলামি জোটের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়াল, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, প্রগতিশীল ন্যাপের আহ্বায়ক পরশ ভাসানী প্রমুখ।