মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী: কক্সবাজার অঞ্চলে মানবপাচার দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। মানবপাচারের মূল হোতাদের সহজে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা। মূল মানবপাচারকারীরা খুবই শক্তিশালী। তাই মানবপাচার বিষয়ে সরকারের ঘোষিত “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বনে সরকারের সকল এজেন্সি, এ সংক্রান্ত বেসরকারি সংস্থা, আইনজীবী, প্রসিকিউটর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে মানবপাচার প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী এসোসিয়েশন (BNWLA) এর Assistant to Vulnerable Migrants and Counter trafficking প্রকল্পের আওতায় “Consultation session to strengthen the legal service delivery system with Lawyer’s and Law enforcing agencies on counter trafficking issue” শীর্ষক এক পরামর্শ সভায় বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী’র সভাপতিত্বে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা International Organisation for migration (IOM) এর সহায়তায় কক্সবাজার জেলা জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত Consultation session এ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন র্যাব-১৫ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ.এম সাজ্জাদ হোসাইন, কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা।
কনসালটেসন সেশনের অতিথি র্যাব-১৫ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ.এম সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, র্যাব একটি বিশেষায়িত বাহিনী। আইনী সীমাবদ্ধতার কারণে মামলার তদন্ত সহ অন্যান্য কার্যক্রম র্যাবের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে মানবপাচারে জড়িতরা সহ সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব-১৫ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পেশাদারীত্ব নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি বলেন, মানবপচারের মামলাগুলো জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হ্যান্ডেলিং করে থাকে। তিনি বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ সমুহ চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিরোধকারীদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সম্ভাব্য পাচার হওয়াদের জন্য সুরক্ষা বলয় সৃষ্টি করতে হবে। তাঁর মতে, সকল সেক্টর সম্মিলিতভাবে কাজ করলেই কেবল মানবপাচার প্রতিরোধে করা সম্ভব। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা আশংকাজনকভাবে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ায় তাদের জন্য কক্সবাজারে সবকিছু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে মানবপাচারও অনেকটা কমে আসবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা বলেন, মানবপাচার মামলায় অভিযোগপত্র তৈরিতে আইনের বিধান অনুযায়ী প্রসিকিউটরের পরামর্শ নিলে এবং সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আরেকটু তৎপর হলে মানবপাচার মামলা গুলো নিষ্পত্তি করা আরো সহজ হবে।
কনসালটেসন সেসনে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট সাফা বিনতে আবদুল্লাহ, অ্যাডভোকেট রেবেকা সুলতানা, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান লিটন, অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট তারেক আজিজ রানা, অ্যাডভোকেট মো: জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু, অ্যাডভোকেট বিমল কান্তি দে, অ্যাডভোকেট রাবেয়া সুলতানা, অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ভৌমিক, দৈনিক সমুদ্রকন্ঠের বার্তা সম্পাদক আমিরুল ইসলাম মোহাম্মদ রাশেদ, কক্সবাজার থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) এস.এম শাকিল হাসান, পিবিআই এর ইন্সপেক্টর তাওহীদুল আনোয়ার, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা, ৩৪, বিজিবি’র নায়েব সুবেদার মোঃ ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।